ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এই অভিযানের অংশ হিসেবে দেশের নয়টি জেলায় নদীতে ১৭টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে কেউ ইলিশ আহরণ, পরিবহন বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী। শনিবার (৪ অক্টোবর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে প্রতিবছরের মতো এ বছরও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী সারা দেশে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ পালিত হবে। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় সব প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক ইলিশসহ সব প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের ঘোষিত এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমুদ্র, নদী ও উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন রয়েছে নৌবাহিনী। এতে বলা হয়, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৭টি যুদ্ধ জাহাজ ৯টি জেলায় নিয়োজিত রয়েছে। এ অভিযানের অংশ হিসেবে চাঁদপুর এলাকায় বানৌজা ধানসিঁড়ি, শহীদ ফরিদ ও বিএনডিবি গাংচিল অভিযানে রয়েছে। কক্সবাজার এলাকায় রয়েছে বানৌজা অতন্দ্র, শহীদ মহিবুল্লাহ, দুর্জয়, সাগর ও শহীদ দৌলত। খুলনা এলাকায় বানৌজা মেঘনা, চিত্রা ও তিতাস, বাগেরহাট এলাকায় বানৌজা করতোয়া, আবু বকর, দুর্গম, পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় বানৌজা সালাম ও কুশিয়ারা রয়েছে। বরিশাল এলাকায় বানৌজা পদ্মা, চিত্রা ও তিতাস এবং পটুয়াখালী এলাকায় এলসিভিপি-০১৩ বিশেষভাবে টহল প্রদান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি সব প্রকার মৎস্য শিকারীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ এবং অত্যাধুনিক মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফটের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্লিটের জাহাজ, ক্রাফট এবং বোটগুলো ইলিশের প্রধান প্রজনন অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। আরও জানায়- স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, ও মৎস্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ ইলিশ আহরণ ও বিদেশি মাছ ধরার ট্রলারের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করবে নৌবাহিনী। অভিযানকালে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত অসাধু ব্যক্তি ও যান্ত্রিক মৎস্য নৌযানগুলোর ওপর কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ইলিশ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখা, অবাধ প্রজননের সুযোগ সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে মা ইলিশের সুষ্ঠু সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে নৌবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা নিবেদিত। বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সমুদ্রসীমায় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাচুর্য বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সমৃিদ্ধতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।