মাঠ প্রশাসনের জন্য রেশন সুবিধার প্রস্তাব

বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকেরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রেশন সুবিধা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, চাল, ডাল, তেল, আটা ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশন হিসেবে দেওয়া হবে।গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উপলক্ষে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারেরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত আলোচনায় এ রকম ২১টি প্রস্তাব দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনের প্রথম দিনে বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আজ ও আগামীকালও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধিবেশন চলবে। এবার ৩৪টি অধিবেশনের মধ্যে ৩০টি কর্ম অধিবেশন। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের দেওয়া প্রায় ১,০৫০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি আলোচনার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং গোপালগঞ্জ ও জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য রেশন–সুবিধা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের যুক্তি, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন বাহিনীর মতো দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করেন। যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন–সুবিধা পাচ্ছেন, তবে মাঠ প্রশাসনের জন্য এ ব্যবস্থা নেই। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রেশন–সুবিধা চালু হলে কর্মীদের কর্মস্পৃহা বাড়বে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য লাঘব হবে। চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশনের পাশাপাশি ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক। আর অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক।পার্বত্য জেলাগুলোতে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক পাহাড়ি ভাতা যৌক্তিক হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকেরা।

বর্তমানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের (এডিসি) বদলি ও পদায়ন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পদায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়কে, যারা পরে ইউএনওদের বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন করেন। তবে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি ও পদায়নের দায়িত্বও বিভাগীয় কমিশনারদের হাতে ন্যস্ত করার। একই সঙ্গে, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেছেন, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে পদায়নের সময় তাকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিসি) অধীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ার।

বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি প্রশিক্ষণ কোর্স যথাক্রমে বনিয়াদি (ফাউন্ডেশন) কোর্স, সার্ভে সেটেলমেন্ট কোর্স এবং আইন-প্রশাসন কোর্সকে সমন্বয় করে এক বছর মেয়াদি কোর্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। এ ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত হওয়ার পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

আরও যত প্রস্তাব রয়েছে
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেছেন, ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মরত কর্মচারীদের মাসিক টিফিন ভাতা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা করা হোক। পাশাপাশি, সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের জন্য দেওয়া ‘শিক্ষা সহায়তা ভাতা’ দুই হাজার টাকায় উন্নীত করারও প্রস্তাব দেন তিনি। বর্তমানে এই ভাতা প্রতি সন্তানকে ৫০০ টাকা হারে দেওয়া হয় এবং সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য ১,০০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এছাড়া, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

সিলেট বিভাগে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার।

জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবনে বাবুর্চির পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ইউএনওদের ২৪ ঘণ্টা কর্মস্থলে থাকতে হয়, তাই এই সুবিধা প্রয়োজন। পাশাপাশি, একজন জেলা প্রশাসক জনপ্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন। জনবল সংকট নিরসনে, আরেক জেলা প্রশাসক বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের অধীনে ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে নবম গ্রেডের একাধিক পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে কেপিআইভুক্ত (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) ঘোষণা করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!