মাঠ পর্যায়ে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা কর্তৃপক্ষের আরোপ করা যে কোনো ট্যাক্স পরিশোধ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। বৃস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সোহেল বলেন, ‘দয়া করে দুর্নীতি বন্ধ করুন, আপনারা যা চাইবেন আমরা তাই দিতে প্রস্তুত।’তিনি আরও বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা (এআরও) এনবিআর চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট অফিস থেকে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন। তখন থেকে টেরি টাওয়েল খাতের রপ্তানিকারকদের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতি চালানের জন্য সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।’
বাংলাদেশ হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারক সমিতির প্রতিনিধি শহীদুল ইসলামও কর হয়রানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।তিনি বলেন, ‘মূল্যায়নকালে একজন কর কর্মকর্তা আমার ১৩৫ কোটি টাকার রপ্তানি মূল্যের ওপর ৩৫ কোটি টাকার কর আরোপ করেছিলেন। আমাকে গোপন লেনদেনের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করতে হয়েছিল।’ব্যবসায়ীরা কেন এই ধরনের উপায় অবলম্বন করেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফাইল আটকে গেলে বিলম্বের কারণে আর্থিক ক্ষতি বেড়ে যায়, যা আমরা বহন করতে পারি না।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন।তিনি বলেন, ‘এগুলো মোকাবিলায় আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’এনবিআর শিগগিরই মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেবে জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অসদাচরণের কোনো প্রমাণ পেলে দায়ী কর্মকর্তাদের চাকরি হারাতে হবে।’তবে তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় গোপন লেনদেনে জড়িত থাকায় দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা কঠিন।তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যদি ঘুষ দেওয়া অব্যাহত রাখে তাহলে দুর্নীতি দূর করা কঠিন হবে।’
তিনি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত করেন এবং জানান, ‘আপনারা কথোপকথন রেকর্ড করতে এবং আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন।’তবে ভয়ে অনেক সময় অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
কর হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিটিআরসি) সহসভাপতি কাজী আনোয়ার হোসেন।তিনি বলেন, ‘হয়রানির ভয়ে আমরা কর রিটার্ন দাখিল করতে অনিচ্ছুক। গতকাল আমি কর অফিস থেকে নোটিশ পেয়েছি, যাতে আমার ২০২০-২১ অর্থবছরের রিটার্ন অডিট করার জন্য বলা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যেই কর দিচ্ছেন, তারাই সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েন।’জুয়েলারি ব্যবসার নেতা আনোয়ার হোসেন কর্মজীবনের শুরুর দিকে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে আর কোনো কর ছাড় দেওয়া হবে না এবং বিদ্যমান ছাড়গুলোও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে।’তিনি বলেন, ‘এই অর্থবছর শেষে কোনো খাতের জন্য কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হবে না।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বস্ত্র খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।তিনি বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার অপব্যবহার এবং একক ঋণপত্রের (এলসি) আংশিক চালান সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন। এনবিআরের সহায়তা চেয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, আগামী বছরের মধ্যে ৯০% টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’