মন্ত্রী-সচিবের সংখ্যা কমানোর সুপারিশ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সংখ্যা ৩৫-এ সীমিত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি সচিবের সংখ্যা কমিয়ে ৬০ করার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে ১৭ জন হবেন মুখ্য সচিব বা প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে বুধবার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রশাসন ও শাসনকাঠামোয় বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশে রূপান্তর ও ঢাকা-আশপাশের এলাকায় ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৪৩ থেকে কমিয়ে ২৫ (রাষ্ট্রপতির সচিবালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২৭) এবং বিভাগের সংখ্যাও কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৩ জন মন্ত্রী রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে দুজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। পাশাপাশি ১২ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। গত ৫৩ বছরে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ১৫ থেকে ৩৬টির মধ্যে ওঠানামা করেছে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় অযৌক্তিকভাবে সংখ্যা বেড়েছে। একই বিষয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের কাজের ফলে ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রশাসনের দক্ষতা হ্রাস পেয়েছে। অতীতের সংস্কার কমিশনগুলোও মন্ত্রণালয় কমানোর সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি।

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কতজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন, তা ঠিক করেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ছিল ৪৪। এর আগের মেয়াদে ছিল ৪৯।জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৩ জন মন্ত্রী রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। এ ছাড়া ১২ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রাখার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রাথমিক শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কারিগরি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগ নামে তিনটি পৃথক বিভাগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় একীভূত করে সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৮০ থেকে কমিয়ে ৬০ জন করার সুপারিশ করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সংখ্যা আগের মতো একজনই থাকবে, তবে মুখ্য সচিবের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৭ জন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ থাকবে, সেখানে সচিবের পাশাপাশি একজন মুখ্য সচিব নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে মুখ্য সচিবের মাত্র একটি পদ থাকলেও, পুনর্বিন্যাসের ফলে নতুন বিভাগ সৃষ্টি হলে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। এছাড়া, কমিশন ‘সিনিয়র সচিব’ পদটি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়গুলো কমানোর পাশাপাশি কোন মন্ত্রণালয় কাদের সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সুপারিশও করেছে কমিশন। রাষ্ট্রপতির সচিবালয় এখনকার মতোই আপন বিভাগ ও জনবিভাগ নিয়ে চলবে। এই দুই বিভাগের জন্য একজন মুখ্য সচিব থাকবেন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশনের প্রস্তাবে কেবল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাখার কথা বলা হয়েছে। আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ একীভূত হবে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এই মন্ত্রণালয়ে মুখ্য সচিব এবং সামরিক সচিব রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও প্রধানমন্ত্রীর হাতে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিমন্ত্রী থাকবেন, আর সচিব থাকবেন একজন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এখনকার মতো তিনটি বিভাগ (অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) থাকবে। এখানে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি একজন মুখ্য অর্থসচিব এবং তিনজন সচিব রাখার কথা বলেছে কমিশন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!