একুশে পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাচ্ছিল। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পার হলে ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে করে একদল তরুণ বাসটি অনুসরণ শুরু করেন। এরপর প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ বাসটিকে ধাওয়া করেন তাঁরা। বাসটি থামানোর জন্য দুই দফায় চালককে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন তাঁরা। এতে চালক আহত হন। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাস চালিয়ে যান তিনি। এতে রক্ষা পান যাত্রীরা।গত সোমবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বাসচালক মো. সোহেলের চোয়াল থেঁতলে গেছে। মাথা ও চোয়ালে লেগেছে ৩১টি সেলাই। ভেঙে গেছে নিচের পাটির দুটি দাঁত।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) কথা হয় বাসটির সহকারী মোহাম্মদ রাহাতের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা। মোহাম্মদ রাহাত বলেন, বাসটি যখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পার হয়, তখনই ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে থাকা একটি দল দেখতে পান তাঁরা। কিন্তু তখনো বিপদ আঁচ করতে পারেননি চালক কিংবা সহকারী। বাস থামাতে না পেরে মোটরসাইকেলের আরোহীরা প্রথমে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ছাতারপাইয়া রাস্তার মাথায় এবং পরে বেগমগঞ্জ উপজেলার আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে চালককে উদ্দেশ করে ইট ছোড়েন।
রাহাত বলেন, দুই দফায় ইটের আঘাত লাগে বাসচালক সোহেলের মাথায়। তবুও তিনি থেমে যাননি। প্রথম আঘাতের পর তাঁর মুখ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা বাস চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।বাসচালকের সহকারী আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে পথে কোনো যাত্রীকে নামতে দিইনি। বাসটি সরাসরি নোয়াখালী সুধারাম থানার সামনে গেলে সব যাত্রী দ্রুত থানায় ঢুকে পড়ে।’
বাসচালক মো. সোহেল বর্তমানে নোয়াখালীর মাইজদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি কোনো কথা বলতে পারছেন না।চালকের অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় তাঁর ছোট ভাই মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার টাকা বাসমালিক দিয়েছেন। চিকিৎসার খরচ চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। বাসের মালিক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরে সুধারাম মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে চান। কিন্তু সুধারাম মডেল থানা থেকে সোনাইমুড়ী থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সোনাইমুড়ী থানা থেকে আবার লাকসাম থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।জহিরুল ইসলাম বলেন, হামলায় আহত বাসচালক সোহেলের মাথা ও চোয়ালে ৩১টি সেলাই লেগেছে। বাসে থাকা ৩৮ যাত্রীর মধ্যে নারী ও শিশু ছিল।
এ ঘটনার সঙ্গে পেশাদার ডাকাতির ঘটনার মিল নেই বলে দাবি করেছেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম। তিনি বলেন, ডাকাতির উদ্দেশ্য থাকলে তাঁরা একটি বাসকে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা কেন ধাওয়া করবে? এই রুটে অনেক গাড়ি চলাচল করে, গত পাঁচ বছরে কোনো বাস ডাকাতির ঘটনা পাওয়া যায়নি। মোটরসাইকেল আরোহীদের সাইড দেওয়া নিয়ে বাসচালকের দ্বন্দ্বের জেরেও এমনটি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।ঘটনার বিস্তারিত জানতে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে খায়রুল আলম বলেন, ‘আমরা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা এই রুটের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কাজ করছে। এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।’