ভ্যাট ফাঁকি দেয় ‘নাসির গ্লাস’

বিশেষ প্রতিবেদক: দেশের বৃহত্তম শিল্প সংস্থা নাসির গ্রুপ। এই গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দেশের বৃহৎ গ্লাস উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. মইনুল খান জানিয়েছেন, নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ৮৫ সরওয়ার্দী এভিনিউ, বারিধারা, ঢাকা-১২১২ এ নিবন্ধিত। এর ভ্যাট নিবন্ধন নং-০০১২২৫১৬৪-০১০৩। প্রতিষ্ঠানের কারখানা নগর হাওলা (জৈনাবাজার), শ্রীপুর, গাজীপুর এ অবস্থিত। ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি দল নাসির গ্লাসের ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তদন্ত পরিচালনা করেন।

প্রতিষ্ঠানটির দাখিলকৃত সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই এবং পর্যালোচনা করে মামলার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তকালীন প্রতিষ্ঠানের আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেয়া হয়েছে।

তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রণীত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ভ্যাট এর হিসাব অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৯ লাখ ৯ হাজার ৮৩৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় বা প্রযোজ্য মূসকের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার ৯৩৮ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ ৩ হাজার ১০৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৮৩৪ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে দেখা যায়, নাসির গ্লাস প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে এই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

তাছাড়া তদন্ত মেয়াদে প্রদেয় ও চলতি হিসাবের পার্থক্য, সোডিয়াম সালফেট অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, প্রাকৃতিক গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, বিজ্ঞাপন অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, মিক্সার গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, উপকরণ মূল্য সাড়ে ৭ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রেয়াত কর্তন, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে রেয়াত কর্তন, ঘোষণায় করযোগ্য মূল্যভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত না থাকায় রেয়াত কর্তন এর কারণে প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। আমদানি পণ্য (ষ্পেয়ার পার্টস) ক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে খোলাবাজারে বিক্রি করায় রাজস্ব বাবদ প্রতিষ্ঠানটি কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৮ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়েছে এই ফাঁকির উপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২২০ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।

তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত মূসক এর পরিমাণ ১১ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ১১৯ টাকা এবং সুদ বাবদ ৩ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার ৫৪ টাকাসহ ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। তিনি আরো জানিয়েছেন, তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত মূসক আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের গ্রহণসহ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, নাসির গ্রুপের সমষ্টিগত শিল্পের মধ্যে রয়েছে গ্লাস, তামাক, মুদ্রণ এবং প্যাকেজিং, এনার্জি সেভিং ল্যাম্প। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ১৯৭৭ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। নাসির গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-নাসির বিড়ি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনবিআইএল), নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনটিআইএল), নাসির লিফ টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনএলটি), নাসির শিল্প গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনজিআইএল), বাংলাদেশ মেলামাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনটিআইএল), নাসির প্রিন্টিং প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনপিপিআইএল), নাসির গ্লাসওয়্যার অ্যান্ড টিউব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এনজিটিআইএল), বাংলাদেশ ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জাম্প কেডস), নাসির এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিশ্বাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাসির স্টার্চ কোম্পানি লিমিটেড (এনএসসিএল)।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!