ভ্যাট ফাঁকিতে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘দারাজ’

** এক বছরে পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯১ কোটি টাকা, দাখিলপত্রে দেখানো হয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা
** দারাজের সেবা গ্রহণের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টাকা
** স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উপর ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি প্রায় ৩৬ লাখ টাকা, দাবিনামা জারি

পণ্য বিক্রয় হয়েছে প্রায় ৯১ কোটি টাকা। কিন্তু দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) দেখা হয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। মূলত ভ্যাট ফাঁকি দিতেই দাখিলপত্রে বিক্রয় গোপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উৎসে মূসক হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। এছাড়া স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উপর সঠিকভাবে উৎসে কর পরিশোধ করা হয়নি। অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এই তিন খাতে ভ্যাট পরিহার বা ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এই ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট থেকে প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

মূসক গোয়েন্দার ১৪ জুলাই দাখিল করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) এর মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় এক বছরের নিরীক্ষা করা হয়েছে। নিরীক্ষার সময় দারাজের বার্ষিক প্রতিবেদন (সিএ রিপোর্ট), মাসিক দাখিলপত্র ও ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

মাসিক দাখিলপত্র যাচাইয়ে দেখা গেছে, দারাজ ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পণ্য বিক্রি হয়েছে ৯১ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার ১০৮ টাকা। কিন্তু মাসিক দাখিলপত্রে দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৬ টাকা। অর্থাৎ ৫ কোটি ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৪১২ টাকা কম বিক্রি দেখানো হয়েছে। যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট সুদসহ ৪৮ লাখ ৬ হাজার ৮৪ টাকা (সুদ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত)। অফিস ভাড়া বা স্থান-স্থাপনা ভাড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত স্থান-স্থাপনা ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে ৩১ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৫ টাকা। যাতে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি ২১ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৫ টাকা, যা সুদসহ দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৭ টাকা।

অপরদিকে, লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে দারাজ একটি উৎসে কর্তনকারী সত্ত্বা। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ বা কেনাকাটার উপর উৎসে ভ্যাট কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দারাজ ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি সেবা গ্রহণে ১১০ কোটি ১২ লাখ ২৯ হাজার ৭৮ টাকা ব্যয় করেছে। যাতে প্রযোজ্য উৎসে ভ্যাট ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭ টাকা। আবার ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৯টি সেবা গ্রহণে ১৯৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৮ টাকা ব্যয় করেছে। যাতে প্রযোজ্য উৎসে ভ্যাট ২০ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ১৭১ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩০৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৬ টাকার সেবা গ্রহণ করেছে। যাতে প্রযোজ্য উৎসে ভ্যাট ৩০ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ২২৮ টাকা। এর মধ্যে দারাজ ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ২৯৬ টাকা পরিশোধ করেনি। যাতে সুদসহ দাঁড়ায় ১ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৩ টাকা।

এই বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন সদস্য বিজনেস বার্তাকে বলেন, দারাজ বহুজাতিক কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিহার বা ফাঁকি অপ্রত্যাশিত। প্রতিষ্ঠানকে আরো কঠোর নজরদারিতে রাখা উচিত, যাতে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ না পায়।

এই বিষয়ে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার তাসফিন আলম বলেন, আমি প্রথম শুননাল। বিষয়টি আমি দেখি না। আমাদের কনসার্ন টিমকে দিচ্ছি, তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পরে দারাজ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম রাব্বি যোগাযোগ করেন। তিনি দারাজ বাংলাদেশ এর প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস রুশোর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। রুশো বলেন, একটি চিঠি পেয়েছি, রিপ্লাই করেছি। ফাইনালি ডিসিশন যদি হয় দিয়ে দিতে হবে, তাহলে দিয়ে দেবো। এটা রেগুলার প্রসেস। তথ্য গোপনের কিছু নেই।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!