প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, নির্বাচন কারসাজি ও ভোট-সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাময়িক জয় পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা দেশের জন্য, দলের জন্যও মঙ্গলজনক হয় না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে এমন উদাহরণ রয়েছে।’
রোববার (২ মার্চ) দুপুরে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন এসব কথা বলেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে ভোট কারসাজি ও সন্ত্রাসের কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানান।
সিইসি বলেছেন, দীর্ঘদিন মানুষ ভোট দিতে পারেননি, তবে এখন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, যদি ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চাইত তারা কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, এবং যদি তারা সম্মত হতো, তাহলে তাদের কাছ থেকে সই নেওয়া উচিত ছিল। এতে তারা নির্বাচনী আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার করত, দলের প্রার্থী কোনো বিশৃঙ্খলা করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিত এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করত।’
সিইসি মনে করেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এভাবে লিখিত নেওয়া হয়, তাহলে সেটা দলগুলোর ওপর চাপ হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনের কাজও সহজ হয়ে যাবে।মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া শুধু এখন আর অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও বলে জানান তিনি।
নাসির উদ্দীন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দেবে। এটা ভিন্ন ভিন্ন হবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। রাজনৈতিক দলগুলো যখন বিপরীতমুখী বক্তব্য দেয়, তখন তিনি আশাহত হন না। তিনি বিশ্বাস করেন, দলগুলো একপর্যায়ে একমত হবে।’
খোলা মাঠে ভোট চান তাহমিদা
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য বদ্ধ ঘরের পরিবর্তে খোলা মাঠে ভোট আয়োজনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ নির্বাচন আমার খুব পছন্দের বিষয়। আমি চাই, আমাদের ভোট যেন স্বচ্ছ হয়। কিন্তু তা সম্ভব হবে কীভাবে, যদি আমরা একটি বদ্ধ ঘরে নির্বাচন আয়োজন করি? তাই আমি চাই, আমাদের নির্বাচন হোক খোলা মাঠে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি সবাই সহযোগিতা করে, তাহলে আমি এই সংস্কার করতে চাই—খোলা মাঠে নির্বাচন আয়োজন করতে চাই।’
অনুষ্ঠানেই তাহমিদা আহমদের এই বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে আরেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘এটি বাস্তবসম্মত কি না, তা ভাবতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের শাসক নির্বাচন করে। ভোটারদের মতামত তখনই প্রতিফলিত হবে, যদি ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারেন।’
কেউ দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, তাঁরা কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা ভাঙবেন কিন্তু মচকাবেন না।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আরেকটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। এর আগে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন জানান, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার।