ভারতের সঙ্গে ৩ স্থলবন্দর বন্ধ, ১টি স্থগিতের সিদ্ধান্ত

সরকার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অলাভজনক তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ এবং আরেকটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম নেই এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে না ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন যে তিনটি বন্দর বন্ধের তালিকায় রয়েছে, সেগুলো হলো নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ ও রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর। এছাড়া ভারতীয় অংশে অবকাঠামো না থাকায় হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।

চলতি বছরের ২৮ জুলাই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় পরিকল্পনা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চারটি স্থলবন্দর ছাড়াও আরও চারটি বন্দরকে অলাভজনক ও নিষ্ক্রিয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—শেরপুরের নাকুগাঁও, ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া-কড়ইতলী, জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর এবং দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দর।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এসব বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি পরিদর্শন শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জমা দেয়। এর আগে, গত ২২ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখ স্থলবন্দর বন্ধ এবং বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। ওই সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে মতামতসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখ স্থলবন্দরে বর্তমানে কোনো আমদানি-রপ্তানি বা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চলছে না। এসব বন্দরে জমি ও অবকাঠামোরও অভাব রয়েছে। ভবিষ্যতেও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা না থাকায় অলাভজনক বিনিয়োগ এড়াতে এগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলেও ভারতীয় অংশে (পাহাড়মুড়া) অবকাঠামো না থাকায় কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ভারতীয় অংশের উন্নয়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্দরটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাল্লা বন্দরের অবকাঠামো বিকল্পভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনাও যাচাই করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

চিলাহাটি স্থলবন্দর

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্তে অবস্থিত এই স্থলবন্দরটির বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে হলদিবাড়ী এলসিএস রয়েছে। স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি সহজ করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই চিলাহাটি শুল্কস্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে। তবে বন্দরের জন্য কোনো জমি ক্রয় বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। এখানে বাংলাদেশ-ভারতের রেল সংযোগ রয়েছে এবং রেলপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধাও আছে। এই এলাকা বুড়িমারী স্থলবন্দরের আওতাধীন। ভারতের অংশে স্থলবন্দর সংক্রান্ত কোনো অবকাঠামো না থাকায় এখানে কোনো অনুমোদিত পদ বা জনবল নেই। নিকটতম স্থলবন্দর লালমনিরহাটের বুড়িমারী, যা প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এসব কারণেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি চিলাহাটি স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ করেছে।

দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার চ্যাংখালী সীমান্তে অবস্থিত দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই শুল্কস্টেশন থেকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বহু বছর আগে এখানে শুল্কস্টেশন ছিল, তবে ১৯৬৫ সালে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে চালু হয়নি। বর্তমানে এখানে শুল্কস্টেশন বা স্থলবন্দরের কোনো কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমি বা অবকাঠামোও এখানে নেই, যা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দৌলতগঞ্জের নিকটতম স্থলবন্দর দর্শনা মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে, আর বেনাপোল স্থলবন্দর প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিপরীত ভারতের অংশে শুল্কস্টেশন বা স্থলবন্দর সংক্রান্ত অবকাঠামো না থাকায় এবং কাছাকাছি কার্যকর দর্শনা স্থলবন্দর থাকার কারণে কমিটি দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ করেছে।

তেগামুখ স্থলবন্দর

রাঙামাটির বরকল উপজেলায় অবস্থিত তেগামুখ স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দেমাগ্রী এলাকা রয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ জুন তেগামুখ শুল্কস্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমি বা অবকাঠামো নেই এবং এই এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক যোগাযোগও স্থাপিত হয়নি।

সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেগামুখ স্থলবন্দরে কোনো এলসিএস চালু নেই এবং বর্তমানে কোনো আমদানি-রপ্তানি বা ইমিগ্রেশন কার্যক্রমও চলছে না। ভারতের অংশে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি তেগামুখ স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ করেছে।

বাল্লা স্থলবন্দর

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারকোট এলাকায় অবস্থিত বাল্লা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পাহাড়মুড়া (খোয়াই) এলসিএস রয়েছে। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বাল্লা শুল্কস্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অংশে অবকাঠামো এবং সংযোগ সড়ক না থাকায় নতুন স্থানে বন্দরটি এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। যদিও বাল্লা শুল্কস্টেশনের বিপরীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের শুল্কস্টেশন ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে নবনির্মিত স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু না হলেও পুরনো বাল্লা শুল্কস্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি চলছে।

**স্থলপথে পাটপণ্য আমদানিতে ভারতের নতুন বিধিনিষেধ
**বাংলাদেশের ৯ পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা
** ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ
** ভারতের সাথে টাগবোট কেনার চুক্তি বাতিল
** বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি
** ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে বড় ঘাটতিতে বাংলাদেশ
** বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত
** বাণিজ্য বিধিনিষেধে বাংলাদেশ নয়, ভারতও ভুগবে
** স্থলবন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানি বন্ধ হচ্ছে
** পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ % শুল্ক ছাড় দিলো ভারত
** বাজার নিয়ন্ত্রণ: চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় চায় মন্ত্রণালয়
** আখাউড়া দিয়ে এসেছে ৬০০ টন গম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!