ভাতা বিতরণে নগদের এককাধিকার সুবিধা বাতিল

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ও অন্যান্য নগদ অর্থ বিতরণে আর একচেটিয়া সুবিধা পাচ্ছে না মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী জুনের পর থেকে উপকারভোগীরা নিজেরা পছন্দ অনুযায়ী এমএফএস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক নির্বাচন করতে পারবেন।

এখন পর্যন্ত সামাজিক ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ বিতরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করত। উপকারভোগীরা নির্ধারিত এমএফএসে হিসাব খুলে সেখান থেকে টাকা তুলতেন। এ ধরনের বেশিরভাগ চুক্তি ‘নগদ’-এর সঙ্গে সম্পাদিত ছিল। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে নগদের সঙ্গে করা এমন একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এই চুক্তি নবায়ন না করার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত ১৫ এপ্রিল সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ জিটুপি (সরকার থেকে ব্যক্তি) পদ্ধতিতে বিতরণসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, উপকারভোগীরা নিজেরাই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বেছে নিতে পারবেন। ক্যাশ আউট চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ০.৬০ শতাংশ, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। উপকারভোগীদের কাছ থেকে নগদ বিতরণে কোনো বাড়তি চার্জ নেওয়া যাবে না। তবে পূর্বে করা চুক্তির ক্ষেত্রে এ হার ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

এতদিন শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ভাতাসহ বেশির ভাগ সরকারি নগদ সহায়তা বিতরণ করা হতো ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সঙ্গে ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য চুক্তি করে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস, যা পরবর্তীতে ‘নগদ’ নামে পুনঃব্র্যান্ডিং হয়। ২০১৯ সালে ডাক বিভাগের সঙ্গে এক সমঝোতার ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক দিনের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়। তখন নগদের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৯ কোটির বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই ছিলেন সরকারি ভাতা ও উপবৃত্তির সুবিধাভোগী।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন কার্যকরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ সহায়তা বিতরণে ‘নগদ’-এর একচেটিয়া সুবিধা কমে আসবে। উপকারভোগীরা এখন নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো এমএফএস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বেছে নিতে পারবেন, ফলে অন্যান্য আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও নতুন গ্রাহক পাওয়ার সুযোগ পাবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ‘নগদ’-এ সরকারের সরাসরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবুও বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২৩ মে যোগাযোগ করা হলে ‘নগদ’-এর হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘আমরাও এ ধরনের প্রজ্ঞাপনের কথা শুনেছি। তবে আমাদের বিশ্বাস, বিপুলসংখ্যক উপকারভোগী আগের মতোই নগদের মাধ্যমেই সরকারি ভাতা গ্রহণ করবেন।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ১ হাজার কোটি টাকা মূল্যের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ বিতরণের একমাত্র দায়িত্বে রয়েছে নগদ। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। এছাড়া সরকারের অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা দেওয়াও চলছে নগদের মাধ্যমে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!