ব্র্যান্ড নিউ গাড়িতে অর্থ পাচার, শুল্কায়নে ‘দ্বিচারিতা

## এলসির টাকা যাচ্ছে এক দেশে, উৎপাদন হয়ে গাড়ি আসছে আরেক দেশ থেকে, যাতে হচ্ছে অর্থ পাচার
## মিৎসুবিশি, হোন্ডা, এক্সপ্যান্ডার, আউটল্যান্ডার, মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়ি আমদানিতে এমন অনিয়ম হচ্ছে
## কাস্টম হাউস ভেদেও হচ্ছে মূল্য আর শুল্ককর পার্থক্য, মানা হচ্ছে না অভিন্ন শুল্কায়ন আদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি: ব্র্যান্ড নিউ মিৎসুবিশি এক্সপ্যান্ডার সেডান কার। ১৪৯৯ সিসির এই গাড়ি মোংলা কাস্টম হাউস দিয়ে আমদানি করেছে জাপানের মিৎসুবিশি গাড়ির বাংলাদেশি পরিবেশক র‌্যাংগস লিমিটেড। প্রতি গাড়িতে মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। সিসি অনুযায়ী শুল্ককর হবে প্রায় ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা। বিলাসবহুল এই গাড়ি কাস্টম হাউস থেকে বের করতে খরচ হবে প্রায় ১৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আবার একই গাড়ি একই আমদানিকারক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতি গাড়ি মূল্য ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সিসি অনুযায়ী শুল্ককর হবে প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কাস্টম হাউস থেকে গাড়ি বের করতে খরচ হবে প্রায় ১৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। দুই কাস্টম হাউসে ঘোষিত মূল্যের পার্থক্য রয়েছে। আজগুবি ব্যাপার হলো, এই গাড়ি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৩২ লাখ টাকার বেশি।

01

আবার ব্র্যান্ড নিউ মিৎসুবিশি আউটল্যান্ডার। ১৯৯৮ সিসির এই গাড়ি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে আমদানি করেছে র‌্যাংগস লিমিটেড। এই গাড়ির মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে প্রতি গাড়ি মাত্র ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সিসি অনুযায়ী, শুল্ককর হবে প্রায় ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। বিলাসবহুল এই গাড়ি হাউস থেকে বের করতে মোট খরচ হবে প্রায় ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অথচ এই গাড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৯ লাখ টাকা। ব্র্যান্ড নিউ হোন্ডা সিআর-ভি এসইউভি। ১৪৯৮ সিসির এই গাড়ি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে আমদানি করেছে ডিএইচএস মটরস লিমিটেড। মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে প্রতি গাড়ি মাত্র ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সিসি অনুযায়ী, এই গাড়ির প্রায় ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অথচ এই গাড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ লাখ টাকা। কেবল এক্সপ্যান্ডার, আউটল্যান্ডার আর হোন্ডা নয়—ব্র্যান্ড নিউ সব গাড়িতে আমদানি আর বাজার মূল্যে ‘আকাশ-পাতাল’ পার্থক্য রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, মূল্য পার্থক্যের মূল কারণ ব্র্যান্ড নিউ এসব গাড়ির ‘ম্যানুফ্যাকচারার্স ইনভয়েস’ থাকে না। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা দেশ থেকে এসব গাড়ি আমদানি করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাড়ির এলসি খোলা হয় এক দেশে। আমদানি করা হয় অন্য দেশ থেকে। আবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই—এমন কোম্পানি থেকে এসব গাড়ি আমদানি করা হয়। এসব গাড়ি আমদানির আড়ালে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

02

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ব্র্যান্ড নিউ এসব গাড়িতে আগে আরও অনেক কম মূল্য ঘোষণা দেয়া হতো। কাস্টমস গোয়েন্দা ও কাস্টম হাউসের তৎপরতায় মূল্য ঘোষণা কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজার মূল্যের তুলনায় ঘোষিত মূল্য অনেক কম। আবার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্ককর ফাঁকি দিতে উপকরণ-উৎপাদন সহগে (৪.৩) অতিরিক্ত খরচ দেখাচ্ছে। তবে অজানা কারণে এই মূল্য ঠিক করতে পারে না এনবিআর। মূল্য ঠিক করার ক্ষেত্রে এনবিআরকে ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। মূল্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা বেশিরভাগ গাড়ির চালানের খালাস আটকে দিয়েছে কাস্টমস। অন্যদিকে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিলাসবহুল এসব গাড়ি আমদানি করছেন বলে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

03

আমদানি করা গাড়ির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তেজগাঁও এলাকার ডিএইচএস মটরস লিমিটেড। বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুর থেকে ২০২২ মডেলের ১৪৯৮ সিসির ১৫টি ব্র্যান্ড নিউ হোন্ডা সিভিক কার আমদানি করেছে। সিঙ্গাপুরের এসটিএস প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড থেকে গাড়িগুলো আমদানি করা হয়। হোন্ডা জাপানি কোম্পানি। তবে গাড়ির উৎপাদনকারী দেশ দেখানো হয়েছে থাইল্যান্ড। অর্থাৎ হোন্ডা গাড়ির উৎপাদনকারী দেশ জাপান থেকে সরাসরি এ গাড়ি আমদানি করা হয়নি। যার ফলে গাড়ির মূল ‘ম্যানুফ্যাচারার্স ইনভয়েস’ নেই। অর্থাৎ এই গাড়ি সিঙ্গাপুরের কোম্পানির নামে এলসি খোলা হলেও উৎপাদন হয়েছে থাইল্যান্ডে। সিঙ্গাপুরের থার্ড পার্টি থেকে এই গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। আবার এই চালানে প্রতিষ্ঠানটি ১৫টি গাড়ির মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯১ টাকা। সে অনুযায়ী প্রতি গাড়ির ঘোষিত মূল্য দাঁড়ায় ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬৬০ টাকা। ১৫ গাড়ির শুল্ককর দেখানো হয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৪ টাকা। সে অনুযায়ী প্রতি গাড়ির ‍শুল্ককর ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪২ টাকা। ঘোষিত মূল্য ও শুল্ককরসহ প্রতি গাড়ি খালাসে প্রতিষ্ঠানের খরচ হবে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০২ টাকা। বাংলাদেশে এই গাড়ির বাজার যাচাইয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪১ থেকে ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ আমদানি মূল্যের অর্ধেকের বেশি দামে প্রতিটি গাড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

04

দেখা গেছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান র‌্যাংগস লিমিটেড। বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২০টি ব্র্যান্ড নিউ মিৎসুবিশি এক্সপ্যান্ডার আমদানি করে। ২০২২ মডেলের ১৪৯৯ সিসির এই গাড়ি আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে জাপানের ককুসাই লিঙ্ক কো. লিমিটেডের নামে। গাড়ির আমদানি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। মিৎসুবিশি জাপানি গাড়ি হলেও সরাসরি উৎপাদনকারী কোম্পানি থেকে আমদানি করা হয়নি। গাড়ি ইন্দোনেশিয়া আমদানি হলেও টাকা গেছে জাপানে। এই গাড়ির মূল ‘ম্যানুফ্যাকচারার্স ইনভয়েস’ নেই। এখানে শেষ নয়। ২০টি গাড়ির মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার ৭১১ টাকা। সে হিসাবে প্রতি গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৫ টাকা। ২০ গাড়ির ‍শুল্ককর ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ২৮১ টাকা। সে হিসাবে প্রতি গাড়িতে শুল্ককর হয় ৮ লাখ ৩০ হাজার ৮৬৪ টাকা। শুল্ককরসহ প্রতি গাড়িতে খরচ দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৩৯৯ টাকা। বাজার যাচাইয়ে দেখা গেছে, ২০২২ মডেলের ১৪৯৯ সিসির মিৎসুবিশি এক্সপ্যান্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩২ লাখ টাকার বেশি।

আরও কয়েকটি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে দেখা গেছে, এলসি খোলা হয় এক দেশে, আমদানি হচ্ছে আরেক দেশ থেকে। সরাসরি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, থার্ড কোনো কোম্পানি থেকে এসব গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে তৈরি হচ্ছে ইনভয়েস। উৎপাদনকারী কোম্পানি থেকে সরাসরি আমদানি না করায় থাকছে না মূল ম্যানুফ্যাচারার্স ইনভয়েস। এর ফলে গাড়ি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে, মূল্য কম ঘোষণা দিয়ে বাজারে এনে এসব গাড়ি বিক্রি করা হচ্ছে বেশি দামে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

05

এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ির চালান লক করে। এসব গাড়ি আমদানিকারক দেশ থেকে যাচাই করে শুল্কায়ন করেছে। যাতে দেখা গেছে, আমদানিকারকের ঘোষণার চেয়ে কায়িক পরীক্ষায় অনেক বেশি শুল্কায়িত মূল্য পাওয়া গেছে। এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এসব গাড়ি আমদানি করেছে। ঘোষণার অতিরিক্ত শুল্কায়ন করা হলেও দেশের বাজারের মূল্যের চেয়ে অনেক কমে এসব গাড়ি ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিলাসবহুল গাড়ি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা হয়। সেহেতু রপ্তানিকারক দেশের ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত মূল্য হতে স্থানীয়ভাবে প্রযোজ্য কর বাদ দিয়ে প্রাপ্ত মূল্যের সঙ্গে ফ্রেইট যোগ করে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানিকারক এএস ট্রেডিং কোম্পানি ২০২২ মডেলের ১৩৩২ সিসির একটি নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চ জিপ আমদানি করে। এই গাড়ির শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৫০০ জিবিপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৬২০। অনলাইন যাচাইয়ে এই গাড়ির কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করে ৩৬ লাখ ২২ হাজার ৪৩৬। কেবল এই গাড়িতে শুল্ককর বাড়ে প্রায় ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এ এম করপোরেশন ২০২২ মডেলের ১৯৯১ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা দেয় বাংলাদেশি টাকায় ৪১ লাখ ৪৮ টাকা। কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়িত মূল্য হয় ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অটো মিউজিয়াম লিমিটেড ২০২২ মডেলের ২৯৯৯ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করে ৮৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। কায়িক পরীক্ষায় মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। একই আমদানিকারক ২৯৯৯ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়িত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। 

06

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, আরেফিন ট্রেডিং ২০২২ মডেলের ২৯৯৯ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৭৪ হাজার জিবিপি, যা কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৮১২ জিবিপি। অভি ট্রেডিং ১৯৯১ সিসির পৃথক দুটি ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের প্রতিটির শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৩৮ হাজার জিবিপি। কায়িক পরীক্ষায় প্রতিটির শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪০ হাজার ৩৪০ জিবিপি। এসএইচকে ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯১ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করে ২৮ হাজার ৫০০ জিবিপি। কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৩ হাজার ৩০২ জিবিপি। শাহেদ অটো ইমপোর্টার ২০২২ মডেলের ২৯৯৯ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করে ৩৮ হাজার জিবিপি। কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৭ হাজার ৯৭ জিবিপি। অভি ট্রেডিং ২০২২ মডেলের ৩৯৮২ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করে এক কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। কায়িক পরীক্ষায় মূল্য নির্ধারণ হয় ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আমিন কার ২৯৯০ সিসির ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের মূল্য ঘোষণা করে ৬০ হাজার জিবিপি, যা কায়িক পরীক্ষায় নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৬৬৬ জিবিপি। একই আমদানিকারক ৩৯৮২ ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ বেঞ্চের শুল্কায়ন মূল্য ঘোষণা করে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কায়িক পরীক্ষায় শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা)।

07

অপরদিকে, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ১২ টাকা কেজি ধরে কমলার এলসি খোলা হয়েছে। ১৮ টাকা কেজিতে আপেল, খেজুরের এলসি হয়েছে ২০ টাকায়। কোটি টাকার মার্সিডিজ বেঞ্জ আনা হচ্ছে ২০ লাখ টাকা দর দেখিয়ে। কর ফাঁকি দিতে এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (দর কম দেখিয়ে) মাধ্যমে পণ্য আমদানি হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে কর ফাঁকি এবং অন্যদিকে অর্থ পাচার হচ্ছে। ১৪ নভেম্বর গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে জরুরি এক বৈঠকে এমন চিত্র তুলে ধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন গভর্নর।

একজন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি ব্র্যান্ড নিউ হ্যাভেল এসইউভি গাড়ির বাজার মূল্য প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। এই গাড়ি শুল্কায়ন হতো ১০ থেকে ১২ হাজার ডলারে বা প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। যাতে শুল্ককর আদায় হতো প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। বর্তমানে বাজার মূল্য বিবেচনায় নেয়ায় প্রতি গাড়িতে আদায় হচ্ছে প্রায় ২১ লাখ টাকা। সম্প্রতি একটি চালানেই প্রায় তিন কোটি টাকার বিপরীতে প্রায় ৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। সব সময় ডেটাবেইস মূল্যে শুল্কায়নের ‘অভ্যাস’ না পাল্টালে শুল্কফাঁকি রোধ করা সম্ভব নয়। 

এই বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাড়ির কত মডেল, কত ধরন, কত কোয়ালিটি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দুটি গাড়ির মডেল এক হলেও বিভিন্ন কোয়ালিটি-কোয়ানটিটির জন্য মূল্য ভিন্ন হয়। প্রতিটি গাড়ির ক্ষেত্রে ভিন্ন রয়েছে। তিনি বলেন, একই মডেলের গাড়ি একেক হাউস দিয়ে একেক ধরনের শুল্কায়ন হওয়ার কথা নয়। এরপরও খতিয়ে দেখা হবে। অভিন্ন শুল্কায়ন সব পণ্যের ক্ষেত্রে হয় না।

এই বিষয়ে বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, রিকন্ডিশন গাড়িতে মোংলায় এক, চট্টগ্রামে আরেক করার সুযোগ নেই। কারণ আমি যাই ঘোষণা দিই না কেন, কাস্টমস ইয়োলো বুক দেখে অ্যাসেসমেন্ট করে। আর ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি অ্যাসেসমেন্ট হয় ইনভয়েস ভ্যালুতে। তাদের ক্ষেত্রে একেক বন্দরে এক রকম ভ্যালু থাকলেও থাকতে পারে।

সূত্র-দৈনিক শেয়ার বিজ (২৯.১১.২০২২)

###

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!