বোয়িং কেনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য, উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ছাড় দেয়, তাহলে বাণিজ্যিক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সরকারি পর্যায়ের বাণিজ্য বাড়াতে সরকার বিশেষ সুবিধা দেবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের বিমান বহরের প্রায় সব উড়োজাহাজ বোয়িংয়ের। এমনকি আমাদের বিমানের অবকাঠামোও বোয়িং-নির্ভর। সে অনুযায়ী আমরা শিগগিরই বোয়িংয়ের কাছ থেকে কিছু উড়োজাহাজ কেনার আদেশ দিতে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে অধিকাংশ উড়োজাহাজই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি। যদিও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ফ্রান্সের এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সরকার পরিবর্তনের পর সেই উদ্যোগে অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বাংলাদেশ আবারও বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে—এ তথ্য প্রথমবারের মতো জানালেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির অংশ হিসেবে তুলা আমদানিও উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, তুলার ওপর বর্তমানে শূন্য শুল্ক রয়েছে। তবে আমরা চাই, আমেরিকান তুলার আমদানি আরও বাড়ুক, এজন্য কিছু সুবিধা তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম আমদানির বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে, যেহেতু দেশের সামরিক সরঞ্জামের বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে আমেরিকান ট্রেড বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।

সাংবাদিকরা মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বলতে অস্ত্র বোঝানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, না, এখানে অস্ত্র নয়। মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে বোঝানো হচ্ছে আমাদের যানবাহন, সাঁজোয়া যানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এসব যেগুলো আমরা সংগ্রহ করি, তার বেশিরভাগই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। তারা শুধু বলেছে, কেনাকাটার সময় যেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তাদের বিশেষ কোনো দাবি নেই, শুধু গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রেও তারা একই কথা বলেছে, এবং এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বাংলাদেশের সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠির একটি কপি তিনি ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশও করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প শতাধিক দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের কথাও উল্লেখ ছিল। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পকে একটি চিঠি পাঠান, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয়।

এই তিন মাসের সময়টি মূলত আলোচনা চালানোর সুযোগ হিসেবে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বাজেটে ৬২৬টি পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। তবে তাতে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। ফলে এবার ট্রাম্প ৩৭ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর। আগে যেখানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন নতুন ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে তা দাঁড়াবে মোট ৫০ শতাংশে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে তৈরি পোশাক খাত, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার।

আলোচনায় সরকারের যুক্তিগুলো কী থাকবে- এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যুক্তিগুলো মূলত দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে হবে—প্রথমত, শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সম্পর্কিত অন্যান্য ইস্যুতে যেন আমরা অসুবিধার সম্মুখীন না হই। বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হবে বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের বিদ্যমান বাণিজ্য রক্ষা করা। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের থেকে কিছু দাবি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ও রেগুলেটরি ডিউটি পর্যায়ক্রমে কমানোর প্রস্তাব। আমরা এই বিষয়গুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সরকারের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!