খরচ বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে যোগসাজশের মাধ্যমে বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়েছে দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। ভোক্তার পকেট কেটে তারা লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার মুনাফা। আধা লিটারের বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়ে ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুসন্ধানে যার প্রমাণ পেয়েছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এ অপরাধে প্রভাবশালী ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড, ট্রান্সকম বেভারেজ, মেঘনা বেভারেজ, পারটেক্স বেভারেজ, রূপসী ফুডস (সিটি গ্রুপ), আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড।
কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, অনুসন্ধান করে জানা যায় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা যোগসাজশ করে পানির দাম বাড়িয়েছে। তারা সবাই এক সঙ্গে আধা লিটার বোতলজাত পানির দাম ২০ টাকা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রেতাদের কাছে আধা লিটার পানির বোতল ১০ টাকায় দিচ্ছে আর বিক্রেতারা খুচরা বিক্রি করছেন ডাবল দাম ২০ টাকায়। এতে প্রতি বোতলে তাদের ১০ টাকা লাভ হচ্ছে। যেসব উৎপাদনকারী কম দামে বিক্রি করতে চাচ্ছে এদের কারণে তারা বাজারে টিকতে পারছে না। তিনি জানান, প্রত্যেকটা পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক বাজার দরকার। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে যোগসাজশ করে দাম নির্ধারণ করতে পারে না। বোতলজাত পানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো আইন পরিপন্থি কাজ করেছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর ১৮ তারিখে মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বলা হয়, পানির দাম বাড়িয়ে যেসব কোম্পানি অতিরিক্ত মুনাফা করেছে তাদের অন্যতম অকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। প্রতিষ্ঠানটি স্পা নামে আধা লিটার বোতলজাত পানির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪২০ শতাংশ মুনাফা করেছে। ১৮.৩৩ শতাংশ উৎপাদন খরচ ও ভ্যাট-ট্যাক্স এর কারণে ৩১.৭৮ শতাংশ খরচ হলেও কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ৪২০ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির আগে আকিজের আধা লিটার পানি বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতা লাভ পেতেন ৫.৬২ টাকা। দাম বাড়ার পর যা হয়েছে ৯ টাকা।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিটি গ্রুপ অপর্যাপ্ত তথ্য দেওয়ায় এবং প্রাণ কোনো প্রকার তথ্য সরবরাহ না করায় তাদের মুনাফার পরিমাণ বিশ্লেষণ করা যায়নি। পারটেক্স বেভারেজ পানির দাম বাড়িয়ে ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশন বাড়ালেও কোম্পানির মুনাফা বাড়ায়নি। ঢাকা ওয়াসার শান্তি ব্র্যান্ডের পানির উৎপাদন খরচ বাড়েনি। ফলে তারা ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশনও বাড়ায়নি। এতে করে অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায় ধাক্কাও খাচ্ছে। ১৫ টাকায় পানি বিক্রি করে লাভ কম হওয়ায় তাদের পানি খুচরা বিক্রেতারা দোকানে রাখতে চান না বলে জানা গেছে।