বেভারেজের বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব, এনবিআরের না

কার্বোনেটেড বেভারেজের উপর সরকার সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। সরকার বলছে, কার্বোনেটেড বেভারেজ পণ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। ফলে এসব পণ্যের ব্যবহার কমানোর জন্য সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে এই খাত সংশ্লিষ্টরা বর্ধিত সম্পূরত শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। তারা বলছে, এই খাতে করহার বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি। বিনিয়োগ ও রাজস্ব—দুটো বিবেচনায় বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন ইন্ডাস্ট্রিজ (অ্যামচাম)। তবে এনবিআর বলছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় ব্যবহার কমানোর চাপ রয়েছে। ফলে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না। আগামী বাজেটে এই খাতের জন্য আলাদা কিছু করা হবে। বুধবার (৫ মার্চ) এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যামচাম প্রস্তাব দিলে এনবিআরের পক্ষ থেকে সরাসরি না করে দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

অ্যামচাম এর পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে ডাবল ট্যাক্সসেশন চুক্তি থাকার পরও এনবিআর থেকে সনদ নিতে হয়। এতে সময় অপচয় ও কর পরিশোধে সময় ব্যয় হয়। সেজন্য এই সনদ নেয়ার বিধান বাতিল করার অনুরোধ জানানো হয়। ক্রেডিট নেয়ার জন্য রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দিতে হয়। ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে আগের নিয়ম (টিআইএন থাকলে) বহাল রাখার অনুরোধ জানানো হয়। অফশোর ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আলাদা করপোরেট ট্যাক্স সিস্টেম চালু করার দাবি জানান।

কার্বোনেটেড বেভারেজে সম্প্রতি বাড়ানো সম্পূরক শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে বলা হয়, সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। কার্বোনেটেড বেভারেজের উপর ৩ শতাংশ ন্যূনতম কর রয়েছে। এছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ফলে এ খাতে মোট করহার ৫০ শতাংশের উপরে চলে আসে। বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এই খাতে একটি পজেটিভ ম্যাজার আমরা নেবো। সাধারণ কার্বোনেটেড বেভারেজ, সুইটেড বেভারেজ ও টোব্যাকোতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি কেবিনেটে প্রস্তাব হয়েছে যে, আমাদের যেসব লোকজন নন কমিউকেবল ডিজিজে, যার বড় অংশ হলো অতিরিক্তি লবণ ও অতিরিক্ত চিনির খাওয়ার কারণে। ফলে এই খাতের ব্যবহার কমানো নিয়ে আমাদের ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাপাচাপি আছে। এই খাত থেকে আমাদের ট্যাক্স পাওয়ার জন্য নয়, আমাদের দেশের জনগণের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য সামাজিক একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। ফলে এখাতে সম্পূরক শুল্ক কমবে না, আমরা অন্যদিক দেখার চেষ্টা করবো।

কার্বোনেটেড বেভারেজ বিষয়ে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর প্রতিনিধি বলেন, বেভারেজ খাতে বহুজাতিক ও স্থানীয়—দুই ধরনের কোম্পানি রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কনজাম্পশন ও মার্কেট শেয়ার যাই হোক, ট্যাক্স দিচ্ছে ৮০ শতাংশ। কিন্তু স্থানীয় কোম্পানিগুলো ৫৮ শতাংশ মার্কেট শেয়ার হওয়ার পরও মাত্র ৭০ শতাংশ। ৩ লিটারের উপরের পানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক নেই, কিন্তু ৩ লিটারের নিচে পানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। বিষয়টি এনবিআরকে দেখা উচিত।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ক্রেডিট কার্ড নেয়ার প্রক্রিয়া আরো সহজ করা হবে। আগে রিটার্ন দাখিল কষ্টের কাজ ছিলো। এখন অনলাইন রিটার্ন হওয়ার কারণে তা সহজ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা টিআইএন রাখবো। একবার কেউ টিআইএন নিলেই তারপর থেকে এনবিআর কর্মকর্তারা তাকে রিটার্ন জমা দিতে নানাভাবে তাগিদ দেবেন তুলে ধরে সংস্থার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু তিনি ঘুমাইতে পারবেন না। দেশে এক কোটির বেশি মানুষের টিআইএন থাকলেও আয়কর বিবরণী দেন তাদের মধ্যে কেবল ৪০ শতাংশের মত। অনলাইন রিটার্ন হওয়ার কারণে এখন খুব সিম্পলি রিটার্ন দেওয়া যায়। তার পরেও এটাকে আমরা বিবেচনায় নিলাম। আমরা যেটা করছি পিএসআর-এ, যাদের ই-টিআইএন দিতে হত, তাদের সবাইকে পিএসআরে নিয়ে আসছি। এবার এটাকে ষ্প্লিট করব। যেগুলোর আমরা রিটার্ন এখনই চাই, না হলে হবে না, সেগুলোকে আমরা পিএসআরে নিব। আর কিছুতে আমরা রাখব ই-টিআইএন নেওয়ার ব্যাপারে যে টিআইএন দেখালেই হবে। আগে টিআইএন থাকলেও যারা আয়কর রিটার্ন দিতেন না তাদেরই মূলত করের আওতায় আনতে পিএসআর চালু করা হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন থেকে কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকায় সে সুযোগ থাকবে না। বাকিটা আমাদের লোকেরা…, টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু তিনি ঘুমাইতে পারবেন না। আমাদের অফিসাররা আপনাকে নোটিস করবে। তাকে রিটার্ন দেওয়ার জন্য বলবে। আলটিমেটলি সে একই কথা। তার থেকে পিএসআর দেওয়াই ভাল। তারপরও আপনারা বলছেন, আমরা ওইভাবে কাজ করব।

যারা কম হারে কর দেন আসছে বাজেটে তাদের ওপরও করের বোঝা বাড়বে বলে সতর্ক করে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এনবিআরের লক্ষ্য হচ্ছে, কর অব্যাহতি থেকে বের হয়ে আসা। কারণ এনবিআর যে পরিমাণ কর আদায় করে সমপরিমাণ ছেড়ে দেয়, অব্যাহতি দেয়। আমাদের ওপর কিন্তু হিউজ প্রেসার তৈরি হচ্ছে, সে কারণে যারা যারা একজেম্পটেড ইনকামে (কর অব্যাহতির সুবিধাপ্রাপ্ত) আছেন, তাদের একজেম্পশন উঠে যাবে ধীরে ধীরে। এবারই একটা বড় উদাহরণ আপনারা দেখতে পাবেন। বেশকিছু একজেম্পশন উইথড্র করেছি। বাকিগুলো আপনারা বাজেটে দেখতে পাবেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এত বৈষম্য থাকবে কেন প্রশ্ন তুলে আবদুর রহমান বলেন, “যারা রিডিউসড রেটে ট্যাক্স (হ্রাসকৃত হারে কর) দেয়, আপনি যদি বলেন যে আপনার একটা সাপোর্ট লাগবে, সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সারা জীবনের জন্য হতে পারে না। আপনি পাঁচ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন বা ছয় বছর, দশ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন, শুড বি এনাফ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!