** মাফিয়া চক্রের হুমকির মুখে কর্মকর্তা, তদন্ত কমিটি গঠন
যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসে আড়াই টন নিষিদ্ধ ভায়াগ্রা পাউডার উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নানা কাহিনি বেরিয়ে আসছে। পরপর ভায়াগ্রার ২টি চালান আটকের পর সংঘবদ্ধ চক্র বেনাপোল কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানাভাবে হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করছে। কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে। এর নেপথ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তাদের হেনস্তা করার নানা চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি বেনাপোল কাস্টম হাউসে অপেক্ষমান ট্রাক বোঝাই উপকরণ দ্রুত খালাসের জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এমনকি ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে।
এরপর কাস্টম কর্তৃপক্ষ গোপন খবরের ভিত্তিতে ট্রাকটি আটক করে। পরে ট্রাকে থাকা আড়াই ট্রন ভায়াগ্রার উত্তেজক পাউডার বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হন। এ চালানটি দেশের সর্ববৃহৎ ভায়াগ্রা চালান। যা এর আগে আর কখনো আটক বা উদ্ধার করা হয়নি। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরীক্ষায় পাউডারগুলো ভায়াগ্রা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর আগেও আরও ২শ’ কেজি ভায়াগ্রা পাউডার আটক করা হয়েছে। একটি চক্র বেনাপোলকে ভায়াগ্রা পাউডার পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ভেবে ব্যবহার করছিল। চোরাচালানি চক্র বৃহৎ এ চালানটি খালাসের জন্য প্রভাবশালীদের দিয়ে তদবির করছে। তদবিরে বেনাপোল পৃষ্ঠা কাজ না হওয়ায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। এ নিয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মরত কর্মকর্তারা টেনশনে আছে।
অন্য সংস্থা দিয়ে তাদের টটস্থ রাখার চেষ্টা চলছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বৈধ পণ্যের আড়ালে ভায়াগ্রাজাতীয় উত্তেজক মাদক বেনাপোল বন্দরে ঢুকছে। এমন আগাম খবর পেয়ে তারা আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করছিল। একই সঙ্গে কেমিক্যাল বা পাউডার জাতীয় পণ্যে বিশেষ নজরদারি থাকায় কাস্টম কর্মকর্তা নজরদারি করছিল। এরপর গত ২৪ জুলাই চালানটি আটক করে।
পুরনো ঢাকার মিটফোর্ডে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি ও পশ্চিমবঙ্গের আইবি ট্রেডাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। গত ২১ মে এলসি খোলা হয়েছে। ঘোষিত পণ্যের নাম সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট বলা হয়েছে। আর রাসায়নিক পরীক্ষায় পাওয়া যায় ভায়াগ্রা। এর ঘোষিত মূল্য ৩ হাজার ৫শ’ মার্কিন ডলার। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় কিন্তু প্রকৃত মূল্য হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যেভাবে নেপথ্য উদঘাটন। মিথ্যা ঘোষণার আগাম খবর পাওয়ার পর আমদানিকারকের দাখিলকৃত আমদানি কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ঘোষণা আরও সন্দেহ ঘনিভূত হয়। পণ্যের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে মেশিনে ভায়াগ্রা প্রদর্শন করে।
বারবার পরীক্ষায় একই ফলাফল। ফলে মিথ্যা ঘোষনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এরপরও নমুনা আরও ৪টি ল্যাবে পাঠানো হয়। এভাবে পণ্যটি ৫ বার ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাবের পরীক্ষায় একই ফলাফল পাওয়া গেছে। বেনাপোল কাস্টম কমিশনার বলেন, আড়াই টন ভায়াগ্রা উত্তেজক পাউডার আটকের পর বেনাপোলে একটি সিঅ্যান্ডএফের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন। তদন্তে অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে কাস্টমসের প্রিন্সিপাল কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানোর পদক্ষেপ। চোরাচালান প্রতিরোধে এবং অধিকতর নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ।
কাস্টম কর্মকর্তারা বলেন, বেনাপোলকেন্দ্রিক একটি চোরাচালানি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম করে আসছে। তাদের সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে। তবে কাস্টম কমিশনারের নতুন এ উদ্যোগে একের পর এক অবৈধ পণ্যের চালান ধরা পড়ছে। এ কারণে একটি মহল খোদ কাস্টস কমিশনারকে নানাভাবে হেনস্তা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যার কারণে দেশব্যাপী চোরাচালানি প্রতিরোধে কাস্টম হাউসগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি নিয়ে সম্পৃক্ত করবে বলে জানিয়েছে।