মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা আড়াই টন (২ হাজার ৫শ’ কেজি) ভায়াগ্রা আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই চালানের আনুমানিক মূল্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা। বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুরে বেনাপোল কাস্টমস ক্লাবে এক প্রেস কনফারেন্সে কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জুলাই মাসে একই ধরনের ভায়াগ্রার আরও একটি চালান আটক করা হয় বলেও জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা। এর আগে গত এপ্রিলে ভারত থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের পণ্যের একটি চালানে ২০০ কেজি ভায়াগ্রা (সিলডেনাফিল সাইট্রেট) ছিল বলে নিশ্চিত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিটফোর্ডের বায়োজিদ এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ৫’শ কেজি ‘সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট’ আমদানি করে। রাজস্ব পরিশোধ করে বন্দর থেকে খালাস নেওয়ার সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানটি আটক করেন। গত ৩ জুলাই বিকালে চালান আটকের পর কাস্টম হাউজের নিজস্ব অত্যাধুনিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরে ভায়াগ্রা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
পরবর্তীতে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিবেচনায় পণ্যের নমুনা বুয়েট, বিসিএসআইআর, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে পাঠানো হয়। এক মাসেরও বেশি সময় পর বুয়েট ও বিসিএসআইআর পরীক্ষা শেষে পণ্য চালানটি ‘সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট’ বলে প্রতিবেদন দায়ের করে। পরবর্তীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আবারও ঢাকার ওষুধ প্রশাসন ও কুয়েটে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠায়। তারাও দীর্ঘ সময় পরীক্ষা করে ৯৯.০৮ % সেক্স ভায়াগ্রা পাওয়া গেছে বলে পরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার ১৮২ সদস্য দেশকে মাদক, বিস্ফোরক ও এই ধরনের ক্ষতিকর পণ্য চোরাচালানের বিষয়ে দীর্ঘদিন সর্তক বার্তা দিলেও বাংলাদেশেই বিশ্বের প্রথম এ ধরনের বড় চালান আটক করা হলো। বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হলে তারা ভবিষ্যতে আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন বেনাপোল কাস্টম হাউজকে। চালানটি টেস্টে পাঠানোর আগে পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে কমিশনারকে নানাভাবে জীবননাশেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় যুগ্ম কমিশনার শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিতে ৪৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সেলিম রেজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস-এর লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়। তদন্ত কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।