বেনাপোলের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি আগামী অক্টোবর মাসে চালু হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০ ট্রাক রাখা যাবে। ফলে বন্দরে ট্রাকের মালামাল দ্রুত লোড-আনলোড সম্ভব হবে। এতে যানজট কমার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সড়ক ও রেলযোগাযোগ সহজ হওয়ায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য বেড়েছে কয়েকগুণ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পণ্য পরিবহনের ভোগান্তিও। এ সংকট থেকে উত্তরণে এবং স্থলবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেনাপোলে ‘কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানিয়েছেন, প্রায় ২৪ একর জমির ওপর ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় টার্মিনালে পার্কিং ইয়ার্ড, কার্গো ভবন, বন্দর সেবা ভবন, ইউটিলিতি ভবন, আধুনিক টয়লেট কমপ্লেক্স, ওয়েব্রিজ স্কেল, ফায়ার স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই টার্মিনালটি চালু করা যাবে। এটি চালু হলে বন্দরের দীর্ঘদিনের যানজট হ্রাস পাবে এবং বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান জানিয়েছেন, টার্মিনালটি চালু হলে দীর্ঘদিনের যানজট ও পণ্যজট কমে যাবে। পণ্য দ্রুত আনলোড হওয়ায় ট্রাকও দ্রুত সময়ের মধ্যে চলে যাবে। ফলে আমদানিকারকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। কারণ, পণ্যছাড় করতে দেরি হলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। আর যত বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আনলোড হবে, সরকারের রাজস্ব আয়ও তত বাড়বে। টার্মিনালের অবকাঠামোগুলো যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন, যা বন্দরটির কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। জায়গার সংকটে অনেক পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। এছাড়া ভারতীয় ট্রাকগুলো পণ্য নিয়ে দিনের পর দিন বন্দরে অপেক্ষা করে থাকে। এ কারণে আনলোডিং প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। তবে নতুন টার্মিনাল চালু হলে এ সমস্যা অনেকটা দূর হবে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করছেন।
বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টনে।
যশোরের আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে পণ্যজটের কবলে পড়ে আমাদের জরিমানা গুনতে হতো। কিন্তু টার্মিনালটি চালু হলে সব পর্যায়ের আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা হবে।’
বন্দরের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, ‘কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণে সর্বোচ্চ গুণগতমান নিশ্চিত করা হয়েছে।’ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ কররেন তিনি। অক্টোবরেই টার্মিনালটি উদ্বোধন হবে। টার্মিনাল চালু হলে বন্দরটির সক্ষমতা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দুই দেশের বাণিজ্য আরও সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘টার্মিনাল উদ্বোধন হলে দীর্ঘদিনের যানজট, পণ্যজট কমে যাবে, যার সুবিধাভোগী হবেন আমদানিকরাকরা। তবে পেট্রাপোলে যদি জট নিরসন না হয়, তাহলে এই সুবিধা কোনো কাজে আসবে না।’