দেশের ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাব চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুলের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আদালতে এ তথ্য তুলে ধরেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি নিয়ে আগামী ২২ জানুয়ারি শুনানির জন্য পরবর্তী দিন রেখেছেন।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও আইনজীবী আনিসুল হাসান শুনানিতে ছিলেন। রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরেছেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। তিনি বলেন, ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৮ দশমিক ৩ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকৃত ঋণ হচ্ছে ৩১ হাজার ৭৫ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা। জনতা, আইএফআইসি, সোনালী, রূপালীসহ অন্যান্য ব্যাংক আইন ও প্রচলিত ব্যাংকিং রীতিনীতি ভঙ্গ করে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে ঋণ, পুনঃ তফসিলিকরণ, ঋণের মেয়াদ বাড়ানো, অতিরিক্ত ঋণদান, এলসি–সুবিধাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা রয়েছে। জনতা ব্যাংক একক ঋণ গ্রাহক হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপকে তার প্রাপ্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে দেওয়া ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ জনতা ব্যাংক একাই দিয়েছে।
এর আগে গত ২৫ বছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্য সব ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিশোধের পর ঋণ মওকুফ বিষয়ে তথ্যাদি সরবরাহ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান আবেদনকারী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। ৫ সেপ্টেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এতে বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করতে ও গ্রুপটির কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ আদায় করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন কারাবন্দি। তার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।