ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ৭৯ জনের বিও হিসাবও জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার (৭ মে) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমান, তাঁর স্ত্রী সৈয়দ রুবাবা রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার হাসানের সব শেয়ার ও বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বেক্সিমকো গ্রুপের যে ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেড, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, বেক্সিমকো মিডিয়া লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড, বেক্সিমকো রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বেক্সিমকো কেমিক্যালস, ট্রেডিং, প্রপার্টিজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইনফরমেশন টেকনোলজি লিমিটেড। এছাড়া রয়েছে বেক্সিমকো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, গ্লোবাল লজিস্টিকস, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, কম্পিউটারস, এভিয়েশন, পেট্রোলিয়াম, পাওয়ার কোম্পানি, অ্যাগ্রো কেমিক্যালস, অ্যাস্ট্রো কোম্পানি, হোল্ডিংস, লজিস্টিকস এবং মাইনিং অ্যান্ড এনার্জি কর্পোরেশন লিমিটেড।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা এসব ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অবরুদ্ধের আদেশ হওয়া ৩৭২টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে সালমান এফ রহমানের ৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আর তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নামে দুটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বাকিগুলো তাঁর পরিবার ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। গত ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্রোক করা এসব সম্পদের বেশির ভাগই রয়েছে ঢাকার দোহারে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী , রপ্তানি-বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে গিয়ে সিআইডি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে শায়ান ফজলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের নামে ঢাকার দোহারে প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমি, সেখানে নির্মিত স্থাপনা এবং রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের তথ্য উদঘাটন করে। এরপর ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ অন্য আসামিদের নামে থাকা সম্পদের বিবরণ আদালতে তুলে ধরে ক্রোকের আবেদন করে সিআইডি। আদালত সেদিনই এসব সম্পদ ক্রোক করার আবেদন মঞ্জুর করেন। অপরাধ তদন্ত সংস্থাটি বলছে, ক্রোক করা এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য ২৫০ কোটি টাকা।
মামলাগুলোতে সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডির করা সম্পত্তি জব্দের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং’ ও ‘আর আর হোল্ডিং লিমিটেড’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।