বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি বেকার রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগের বেকারের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৭ হাজার। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৪ হাজার এবং তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী বিভাগে ৩ লাখ ৫৭ হাজার বেকার। খুলনা বিভাগে বেকারের সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ৬ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৩৯ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার।
বেকারের সংজ্ঞা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করেও যদি কেউ মজুরি পান, তবে তাঁকে বেকার ধরা হবে না। কিন্তু কেউ এক মাস ধরে কাজ খুঁজে বেড়ালেও এবং সর্বশেষ এক সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ না পেলে তাঁকে বেকার হিসেবে গণ্য করা হবে। এই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২৪ হাজার। তবে বাস্তবে দেশে সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করে জীবনধারণ সম্ভব নয়। এর বাইরে আরও প্রায় এক কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পছন্দমতো কাজ পান না—তাঁদের বলা হয় ছদ্ম বেকার। উন্নত দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভিন্ন। সেখানে সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেও মজুরির পাশাপাশি রাষ্ট্র থেকে বেকারভাতা মেলে, ফলে ন্যূনতম জীবিকা নির্বাহে তেমন সমস্যা হয় না।
বেকারত্বে এগিয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর জরিপে দেখা গেছে, দেশে বেকারদের মধ্যে শিক্ষিতদের হারই বেশি। মোট বেকারের সাড়ে ১৩ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক পাস। অর্থাৎ, প্রতি পাঁচজন বেকারের একজন স্নাতক বা উচ্চমাধ্যমিক সনদধারী। অন্যদিকে, যাঁদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাঁদের মধ্যে বেকারের হার সবচেয়ে কম—মাত্র সোয়া ১ শতাংশ। জরিপে আরও জানা যায়, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যেই বেকারত্ব বেশি। বর্তমানে এই বয়সী বেকারের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ, যা মোট বেকারের ৭৬ শতাংশ। এ বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ৮ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ২৯ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী, অর্থাৎ তিনজন স্নাতকের মধ্যে একজন বেকার।
বেকারত্ব তিন ধরনের
সাধারণভাবে বেকারত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—সামঞ্জস্যহীনতাজনিত, বাণিজ্য চক্রজনিত এবং কাঠামোগত বেকারত্ব। শ্রমবাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফারাক থাকলে তাকে বলা হয় সামঞ্জস্যহীনতাজনিত বেকারত্ব, যা উত্তরবঙ্গ ও হাওর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। শিল্প ও সেবা খাতে যে ধরনের দক্ষ জনবল প্রয়োজন, সেই সরবরাহ না থাকলেও এ ধরনের বেকারত্ব তৈরি হয়। আবার অর্থনীতির উত্থান–পতনের কারণেও বেকারত্বের হার পরিবর্তিত হয়। যেমন, কোভিড মহামারির সময় বেকারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল—এটি বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব। অন্যদিকে, প্রযুক্তির পরিবর্তনে চাকরির সুযোগ কমে গেলে তাকে কাঠামোগত বেকারত্ব বলা হয়।