জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তিতে মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসায় বিলুপ্তিতে আপত্তি জানিযেছেন কর কর্মকর্তারা। বিলুপ্তি করে পরবর্তী রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আইনি অসুবিধা ও পরিচালনাগত জটিলতার সমাধান না থাকায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার খসড়া অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। রোববার (৪ মে) সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিদুল হাসান সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি জানিয়েছেন।
যাতে বলা হয়েছে, ৩ মে এনবিআরের বিশেষ সাধারণ সভায় সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে সব স্তরের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশে ব্যাপক অসংগতি থাকায়, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ) ক্যাডারের সদস্যরাসহ এনবিআরের অধীন কর্মরত হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকারের পরিপন্থি ও কর্মজীবন বিকাশের পরিপন্থি হওয়ায় এবং এনবিআর বিলুপ্তি পরবর্তী রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আইনি অসুবিধা ও পরিচালনাগত জটিলতার সমাধান না থাকায় খসড়া অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খসড়া অধ্যাদেশে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ— রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বাইরে থেকে অদক্ষ জনবল নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এরফলে রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা, গতিশীলতা ও কার্যকারিতা হুমকির মুখে পড়বে এবং এনবিআরে কর্মরত বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পেশাগত ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর একটি স্বতন্ত্র ও আইনসম্মত রাজস্ব এজেন্সি। এনবিআর বিলুপ্ত হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় আইনি ও কাঠামোগত শূন্যতা সৃষ্টি হবে এবং বর্তমানে প্রচলিত অসংখ্য কর আইন, এসআরও ও নির্দেশনার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এছাড়া খসড়া অধ্যাদেশে একাধিক কাঠামোগত অসংগতি ও আইনি বিভ্রান্তি রয়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে। রাজস্ব নীতি বিভাগকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া, জনবল নিয়োগসংক্রান্ত সুপারিশ কমিটির অস্পষ্টতা ইত্যাদি বিষয়গুলো আইনের দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিল সহ বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আরও দাবির মধ্যে রয়েছে-দেশের একমাত্র রাজস্ব এজেন্সি বিলোপ করার আদৌ প্রয়োজন আছে কি-না সে বিষয়ে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করতে হবে; রাজস্ব এজেন্সি বিলোপের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক পর্যালোচনা এবং বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করতে হবে; রাজস্ব সংস্কারের কাজটি জনগণের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা অর্জনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতীব গুরুত্বপূর্ণ, এই কাজটি সত্যিকার অর্থে অর্থবহ ও কার্যকর করার জন্য প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, আইনবিদ, ব্যাবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজস্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ের একটি কমিশন অথবা কমিটি গঠন করতে হবে। উক্ত কমিশন অথবা কমিটির প্রতিবেদন এবং আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে এনবিআরের কাঠামোগত পরিবর্তনসহ সার্বিক রাজস্ব সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ ছাড়াও, রাজস্ব সংস্কারকে কেবল পৃথক্করণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাজস্ব সংস্কারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমসমূহ, যেমন টেকসই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, রাজস্ব বিষয়ক আইনসমূহ প্রয়োজনীয় সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও অটোমেশন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন অনুরোধ জানিয়েছে।