বিবিয়ানা ফিল্ডে এখনও দেড় টিসিএফ গ্যাসের মজুদ

দেশের গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে সর্বোচ্চ গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। যদিও আগের পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে ফিল্ডটির গ্যাস মজুদ নিঃশেষ হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী এখনো এখানে ১ হাজার ৬৬৭ বিলিয়ন কিউবিক ফুট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে মজুদ কিছুটা কমলেও এখনও অন্তত দেড় ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ আছে।

বিবিয়ানায় গ্যাসের মজুদের বৃদ্ধি দেশের গ্যাস খাতে আশার সূচক হিসেবে মনে করছেন জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, স্থানীয় গ্যাস সরবরাহের ৫০ শতাংশই আসছে এ ফিল্ড থেকে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড দৈনিক যে হারে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করছে, তা যদি অব্যাহত থাকে তবে আগামী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত এই ফিল্ড থেকে গ্যাস পাওয়া সম্ভব হবে।

পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৩৩৮ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট উত্তোলন হয়েছে ৩ হাজার ৪৬ মিলিয়ন ঘনমিটার। গড় হিসাব অনুযায়ী শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট গ্যাস উত্তোলন হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৩ মিলিয়ন ঘনমিটার (১৪৩.৪৮ বিসিএফ)। গত অর্থবছরের তথ্য বাদ দিলে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে এখনও প্রায় ১ হাজার ৫২৪ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২৩-২৪) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২৯টি গ্যাস ফিল্ডে এখনও উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৮.৬৬ টিসিএফ। গ্যাস মজুদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি টু-পি (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য) অনুসারে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে মোট মজুদ রয়েছে ৭ হাজার ৬৬৬ বিলিয়ন কিউবিক ফুট (বিসিএফ)। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৯৯ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। শেষ হওয়া অর্থবছরে আরও ১৪৩.৪৮ বিসিএফ (১ বিসিএফ = ২৮.৩১ মিলিয়ন ঘনমিটার) গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের মজুদ সংক্রান্ত বিষয়ে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য দেয়নি। তবে তারা দেশের গ্যাস খাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, শেভরন বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে অংশীদারিত্বে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে কাজ ও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সহায়তা চালিয়ে যাবে। শেভরন বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জ্বালানি চাহিদা পূরণে জালালাবাদ, বিবিয়ানা ও মৌলভীবাজার গ্যাস ফিল্ডগুলো সর্বোচ্চ মাত্রায় পরিচালনা করছে।

আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে বিবিয়ানায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৩৪ বিসিএফ গ্যাস মজুদ উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বিবিয়ানায় উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মোট মজুদ দেখানো হয় ৫ হাজার ৭৫৫ বিসিএফ, যেখানে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছিল ৫ হাজার ৬২২ বিসিএফ। বর্তমানে দেশে ২০টি গ্যাস ফিল্ড উৎপাদনে রয়েছে। তিতাস ফিল্ডে গত বছরের জুন পর্যন্ত গ্যাসের মজুদ ছিল ১ হাজার ৯১৪ বিসিএফ, যা বিবিয়ানার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিবিয়ানায় তখন গ্যাসের মজুদ ছিল ১ হাজার ৬৬৭ বিসিএফ। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, যার মধ্যে বিবিয়ানায় থেকে ৮৪৮-৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন হয়ে থাকে, যা একক গ্যাস ফিল্ড হিসেবে সর্বোচ্চ।

বিভিন্ন সময় দেশে আইওসিগুলোর আওতায় গ্যাসের মজুদের পরিমাণ জানার চেষ্টা করা হলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশে তিনটি গ্যাস ফিল্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শেভরনের আওতাধীন ফিল্ডগুলোর গ্যাস মজুদের সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। শেভরনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পেট্রোবাংলার প্রকাশিত তথ্য অনেকটাই পুরনো। তবে ২০২৩ সালে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেয়া শেভরন করপোরেশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে শেভরনের আওতাধীন ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস মজুদ ৪৮১ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) বেড়েছে। তবে কোন গ্যাস ক্ষেত্রে মজুদ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. শোয়েব বলেন, সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে সাড়ে আট টিসিএফের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে। বিবিয়ানা ফিল্ডের মজুদ আরও বাড়তে পারে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছে এবং আমাদের পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!