বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে থেকে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো ভ্রমণ কর নিলেও তা অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে দেয় না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, এ কর সরাসরি আদায়ের পরিকল্পনা আছে তাদের। এছাড়া মিষ্টিতে সুপারশপের মত ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি তুলে ধরেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, আবদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে যাত্রীদের (বিদেশগামী) ট্রাভেল ট্যাক্স (ভ্রমণ কর) এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের মূল্যের সাথে যোগ করে নিয়ে নেয়। এই ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনো কখনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যায়।’
এর ফলে কোম্পানিগুলোর কাছে সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলেও সেটা দেয় না’ বলেও তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ অবস্থায় যাত্রীরা যেন সরাসরি নিজে ভ্রমণ কর দেন বা সরকার যেন সরাসরি এ অর্থ আদায় করতে পারে তা নিয়ে এনবিআর কাজ করছে বলে তুলে ধরেন তিনি। আবদুর রহমান বলেন, আমরা চাচ্ছি যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স তারা নিজে দেবেন। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান নিবে এবং সেটা দেখিয়ে চলে যাবেন।মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমেও যাত্রীরা করটি দিতে পারবেন তুলে ধরে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়াটি এত সহজ করা হবে যে যাত্রীরা বিমানবন্দরে সরাসরি কর দিতে পারবেন।
এছাড়াও উপস্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা ব্যবসা সহজীকরণের বিষয়ে বিভিন্ন দাবি জানান।এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এওএবি) জেট ফুয়েলের উপর আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি, উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উপর কর হ্রাসের প্রস্তাব করেছে।স্থানীয় সোলার প্যানেল উৎপাদকদের ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
অপরদিকে, মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও ভ্যাট ফাঁকি দেন বলেও দাবি করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
মিষ্টির উপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশনের মহাসচিব ননী গোপাল ঘোষ বলেন, মিষ্টির উপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল, তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর জবাবে মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আপনি বলছেন ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে। এটা একটা আজগুবি কথা। আপনি ১৫ শতাংশের উপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম হয়, আর সাড়ে ৭ শতাংশে বেশি হয়- এরকম জাদুকরী দেশে বাস করলে তো হবে না। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেয় না। ইএফডি ব্যবহার করে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট দেয় জনগণ। আমি যত মিষ্টি কিনেছি এই জীবনে, সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছি, কিন্তু আমার ভ্যাট সরকারের কোষাগারে আসে নাই। আমার তো বহু বয়স হয়েছে। এই পর্যন্ত দেখলাম না মিষ্টিওয়ালারা আমাকে ভ্যাটের রিসিট দিয়েছে। এই টাকা প্রপারলি…হইছে। এটা দেখি নাই। তিনি বলেন, আমরা মিষ্টির দামে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করবো। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না, ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না, এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করছি। মোট মূল্যের উপর ভ্যাট ধরবো। ক্রেতার জানার দরকার নাই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই জিনিস আমরা সুপারশপে করেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের এবারের বজেটের মূল টার্গেট হচ্ছে আমরা ট্রেন্ড কে ফ্যাসিলিটেড করব। লুপহোলগুলো বন্ধ করব আর বৈষম্য যত পারি কমাব।