বার্তা প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনা ও কর আদায়ে সহযোগিতা করতে বিদেশি কোম্পানি, প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সদস্য (আন্তর্জাতিক কর) মো. আব্দুল মজিদ। রোববার (২৮ আগস্ট) কর অঞ্চল-১১, ঢাকার সম্মেলন কক্ষে ‘অর্থ আইন, ২০২২ এর মাধ্যমে আনীত আইনের পরিবর্তনসমূহ পরিপালন, কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাদান বিষয়ক’ মতবিনিময় সভায় তিনি আহ্বান জানান। সভায় বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি, মেগা প্রকল্প, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উৎসে কর কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কর অঞ্চল-১১ কমিশনার স্বপন কুমার রায় সভাপতিত্ব করেন। কমিশনার স্বপন কুমার রায় অর্থ আইন, ২০২২ এর পরিবর্তনসমূহ, উৎসে কর কর্তন, বিদেশি করদাতাদের সংখ্যা ও কর প্রদান এবং কর অঞ্চল-১১ ঢাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গৃহীত পরিকল্পনার বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানি, বড় প্রকল্প ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ লাখ বেশি কাজ করছেন। অথচ বেশিরভাগকে করের আওতায় আনা যায় না। কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতার কারণে তাদের করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের তালিকা কর অঞ্চলকে দেয়ার অনুরোধ জানান এনবিআর সদস্য মো. আব্দুল মজিদ। সভায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের করের আওতায় আনতে তালিকা দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন অংশগ্রহণকারী কোম্পানি প্রতিনিধিরা।
অর্থবিল, ২০২২ অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি উৎসে কর কর্তনকারী। উৎসে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পসমূহ কর অঞ্চল-১১, ঢাকার আওতাধীন। পদ্মাসেতু, পদ্মা রেল সেতু, যমুনা রেল সেতু, শেভরনসহ বেশ বড় কিছু প্রকল্প ও কোম্পানি থেকে সবচেয়ে বেশি উৎসে কর কর্তন করা হয়। পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে বেশ ভালো পরিমাণ কর (উৎসে কর) পেয়েছে কর অঞ্চল-১১। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ায় চলতি অর্থবছর উৎসে কর আহরণে ধাক্কা লাগবে। অপরদিকে, পদ্মা রেল সেতু, সিভিল এভিয়েশনের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প, ঘোড়াশাল সার কারখানা প্রকল্প, যমুনা রেল সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। আবার শেভরন থেকে উল্লেখযোগ্য হারে উৎসে কর আহরণ হয়। তবে গ্যাস উত্তোলন কমে যাওয়ায় কর কমে যাচ্ছে। উৎসে কর আহরণের ক্ষেত্রে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মতবিনিময় সভায় এসব সমস্যা নিরসনে পরামর্শ দেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আব্দুল মজিদ বলেন, বড় প্রকল্প, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান প্রচুর বিদেশি প্রকর্মী কাজ করছেন। সঠিক হিসাব আর তালিকা না থাকায় তাদের করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব প্রকর্মীদের তালিকা দিতে পারলে এদের করের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তিনি প্রকর্মীদের তালিকা কর অঞ্চলকে দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। উৎসে কর আহরণ বাড়াতে প্রকল্প, দেশি-বিদেশি উৎসে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে কর কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় শেভরন, সিভিল এভিয়েশনের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, ঘোড়াশাল সার কারখানা প্রকল্প কর্মকর্তা, ব্রাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সিটি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যথাযথভাবে কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২১ খাতে ৪৪ দেশের ২ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এর মধ্যে কর দিচ্ছেন ৯ হাজার ৫০০ জন। বাকি ২ লাখ ৪১ হাজার অবৈধ। এরা বেতনের নামে দেশ থেকে বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছেন। যা পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়ের প্রায় সমান। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫০০। আলোচ্য সময়ে তাদের মোট আয় ছিল ৬০৩ কোটি টাকা। আর এখান থেকে সরকারকে কর দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ সংখ্যা ৮৬ হাজার, যাদের বেশিরভাগ ভারতীয়। অপরদিকে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হিসেবে এ সংখ্যা মাত্র ১০ হাজারের কিছু বেশি।
###