প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সতর্ক করে বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবারও পুরোনো সংকট ফিরে আসতে পারে। বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজ এশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। পাশাপাশি, নির্বাচনের পর সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও স্পষ্ট করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। সাক্ষাৎকারের প্রশ্নোত্তর অংশ সংক্ষেপে নিচে উপস্থাপন করা হলো:
সিএনএ: আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ১ বছর ৫ দিন পার হয়েছে। ওই সময় আপনার সামনে অন্তত চারটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। সেগুলো পূরণ করতে পেরেছেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটি কখনো সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু এটাকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজেরা যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, সেগুলো আমরা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছি। একটি লক্ষ্য ছিল সংস্কার। অনেক কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। কারণ, যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদিসহ যেসব ব্যবস্থা পেয়েছিলাম, সেগুলোর সবই জালিয়াতিতে ভরা ছিল। এসব ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হয়। ওই সরকার এই সুযোগ নিয়েছে। পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের সমাজকে নষ্ট করেছে। যখন আমরা সরকারের দায়িত্ব নিলাম, তখন আমরা দেখেছি, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো পরিস্থিতি। সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সিএনএ: গত বছর যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিচারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং শেষে এই সরকারের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস: আমাদের অঙ্গীকার ছিল গণ–অভ্যুত্থানের সময় জাতির যে আকাঙ্ক্ষা, তা নিশ্চিত করা। এগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
সিএনএ: কোনটা গুরুত্বপূর্ণ—নির্বাচন প্রথম, তারপর সংস্কার নাকি প্রথমে সংস্কার তারপর নির্বাচন? আপনি কোন ধরনের নির্বাচন করতে যাচ্ছেন?
অধ্যাপক ইউনূস: একবার ভাবুন, যদি আমরা নির্বাচন দিয়ে শুরু করি তাহলে আমাদের সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বিচারের প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাহলে সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে। কল্পনা করুন, অন্য দুটি কাজ না করে আপনার নির্বাচন হয়েছে। তখন আপনি আবার সেই পুরোনো সমস্যায় ফিরে যাবেন।
সিএনএ: চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পিছিয়ে গেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অধ্যাপক ইউনূস: পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। আমরা কখনো বলিনি, আমরা ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই না। নেপাল ও ভুটানকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে আনতে পারি। ভারতের সেভেন সিস্টার্স—সাতটি রাজ্যও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকতে পারে। কারণ, আমরা বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে একই সুবিধা ভাগ করে নিতে পারি।