গুলশানের বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএসবি গ্লোবালের মালিক খায়রুল বাশার বাহারের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি মৌজায় ১,১০৬ শতাংশ জমি রয়েছে, যার দলিলমূল্য ১০২ কোটি টাকার অধিক। জমি বিশেষজ্ঞরা এসব জমির বাজারমূল্য কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকা হিসেবে ধারণা করছেন। পাশাপাশি, সিআইডি রাজধানীর গুলশান, বারিধারা সহ বিভিন্ন এলাকায় বিএসবি গ্লোবালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য ফ্ল্যাট, ভবন ও জমির তথ্যও পেয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে তাদের আর্থিক লেনদেন ও সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া অবৈধ সম্পদের তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিএসবি গ্লোবালের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বিএসবি গ্লোবালের মাধ্যমে ৫০০’র বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে শত কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই টাকাগুলো দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানে খায়রুল বাশারের নামে একটি দশতলা ভবনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া ভাটারার শহীদ আব্দুল আজীজ সড়কে তার মালিকানায় রয়েছে একটি আটতলা ও একটি ছয়তলা ভবন। বারিধারায় রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে একটি বড় অংশজুড়ে জমি।
সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, বিএসবি গ্লোবাল ভুয়া অফার লেটার, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন এবং ভিজিট ভিসার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করেছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিক্ষার্থীদের নামে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়া, বাশার ও তার পরিবার এই প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখে পরে চেকের মাধ্যমে তা স্থানান্তর করেছে।
ভুক্তভোগীরা অর্থ ফেরত চাইলে বিএসবি গ্লোবাল কখনও শিক্ষার্থী, কখনও প্রতিনিধি বা অভিভাবকের নামে ব্যাংক চেক প্রদান করে। তবে এসব চেক অনাদায়ী (বাউন্স) হওয়ায় অনেক ভুক্তভোগী নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করেছেন। এ পর্যন্ত ১৪১ জন ভুক্তভোগী সিআইডিতে মোট ১৮.২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্তকারীদের ধারণা, প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৫০০ জনেরও বেশি হতে পারে।