** বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজ ও মডেল ৭৪০-ই গাড়ি আমদানি হয়েছে বিএমডব্লিউ-৫ সিরিজ ও মডেল ৫৩০-ই দেখিয়েছে
** ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউকে হাইব্রিড হিসেবে শুল্কায়ন করা হয়েছে, রেজিস্ট্রেশনের সময় মডেল লুকানো হয়েছে
** গাড়ির জাল দলিল তৈরি করে আমদানি করা হয়েছে, একটি জালিয়াত চক্র বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে এই ধরনের জালিয়াতি করে
আমদানি হয়েছে ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউ। শুল্কায়ন হয়েছে হাইব্রিড হিসবে। আমদানি হয়েছে এক মডেল ও সিরিজের গাড়ি। কিন্তু খালাস হয়েছে অন্য মডেল ও সিরিজ হিসেবে। রপ্তানিকারক ভুয়া এক কোম্পানি। যে মডেল ও সিরিজ দেখিয়ে আমদানি হয়েছে, সেই মডেল ও সিরিজ দেখিয়ে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেয়া হয়নি। মডেল ও সিরিজ লুকাতে বিআরটিএ-এর অনুসন্ধানের জায়গায় মডেল লুকিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ির মূল্য ও মডেল লুকাতে সকল আমদানির জাল দলিল তৈরি করা হয়েছে! চার বছরে দুইবার গাড়ি হাত বদল হয়েছে। কিন্তু এত জালিয়াতির পরও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে জালিয়াতি ও শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা বিলাসবহুল সেই ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউ আটক করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও মেসার্স মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপ থেকে সার্ভিসিং করা অবস্থায় গাড়িটি আটক করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি চক্র জাল দলিল তৈরি করে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছে। যার মধ্যে একটি আটক করা হয়েছে। গাড়িটির আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। এই গাড়িতে আন্ডার ইনভয়েসিং, শুল্ককর ফাঁকি, জালিয়াতি, মিথ্যা ঘোষণাসহ বেশ কয়েক ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
কাস্টমস গোয়েন্দার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে একটি চক্র রয়েছে। জাপানে ‘আশরাফ’ নামের এক বাংলাদেশি রয়েছে। সেই আশরাফের ‘আশরাফ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। চক্রের লোকজন বিএমডব্লিউ কিনে জাল দলিল তৈরি করে। অর্থাৎ গাড়ির মডেল, প্রকৃত মূল্য গোপন করে শুল্ককর ফাঁকি ও টাকা পাচার করতে এই জাল দলিল তৈরি করা হয়। এই জাল দলিল দিয়ে গাড়ি বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আর সেই জাল দলিলের ভিত্তিতে ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের গাড়িটি বিএমডব্লিউ-৫ সিরিজ দেখিয়ে খালাস নেওয়া হয়েছে। ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউকে হাইব্রিড হিসেবে শুল্কায়ন করে খালাস নেওয়া হয়েছে। ব্র্যান্ডনিউ বিএমডব্লিউতে ট্যাক্স দেখিয়েছে মাত্র ৪০-৪২ লাখ টাকা! বিএমডব্লিউতে কি এত কম ট্যাক্স হয়? বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের গাড়ি সেই সময় একেবারে লেটেস্ট ছিলো। এটাকে বিএমডব্লিউ-৫ সিরিজ এর ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট দেখিয়ে ঘোষণা দিয়ে খালাস নেওয়া হয়েছে। অথচ গাড়ির চেসিস নাম্বার দিয়ে সার্চ দেওয়া হলে গাড়ির মূল্য থেকে শুরু করে সব চলে আসবে। তবে শো-রুমে বিক্রির সময় কিন্তু বিএমডব্লিউ-৭ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। গাড়ির পেছনে বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের নাম্বারও রয়েছে।
এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের অনুপ বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির কাছে এই গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার পর চৌধুরী ফ্যাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ক্রেতা গাড়িটি সার্ভিসিং করাতে তেজগাঁও মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপে নিয়ে আসে। সেখানে থেকে আমরা গাড়িটি আটক করেছি। বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের গাড়ির ভ্যালু হলো ৭৬ থেকে ৮০ হাজার ডলার। আর বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজ লেটেস্ট। আর বিএমডব্লিউ-৫ সিরিজ হলো অনেক পুরনো মডেল, যার ভ্যালু অনেক কম। হাইব্রিড হিসেবে গাড়িটি শুল্কায়ন করা হয়েছে। ব্র্যান্ডনিউ গাড়িতে শতভাগ সম্পূরক শুল্ক (এসডি), ভ্যালু বাড়বে। জাল দলিল তৈরি করায় ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। বিআরটিএ-তে নিবন্ধনের সময় মডেল দেওয়া হয়নি। নিবন্ধনের সময়ও জালিয়াতি করা হয়েছে। শুল্কায়নের সময় মডেল, সিরিজ কাস্টমস দেখেনি, তাদেরও দায় আছে। গাড়ির চেসিস নাম্বার দিয়ে সার্চ করলেই তো কাস্টমস কর্মকর্তা সব পেয়ে যেতেন। শুল্ককর ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং, জালিয়াতি-সব ধরনের অপরাধ এই গাড়ি আমদানিতে হয়েছে।