বাজেটের ৪-৫ মাস আগ থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। চাহিদার বাড়তি সিগারেট মজুদ করা হয়। কোম্পানির উর্ধবতন কর্মকর্তা, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা মিলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মজুদ করা হয়। বাজেটে সিগারেটের দাম ও রাজস্ব বেড়ে যায়। কিন্তু মজুদ করা সিগারেট ফ্যাক্টরি থেকে বের করা হয় আগের বা পুরনো দামে। বাজেট ঘোষণার পরপরই মজুদ করা পুরনো দামের এই সিগারেট বাজারে ছাড়া হয়। প্যাকেট পুরনো হলেও বিক্রি হয় নতুন দামে। এতে সরকার নতুন দামের উপর কোন ধরনের রাজস্ব পায় না। প্রতিমাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। এই টাকা যায় মূলত কোম্পানি ও ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটেরদের পকেটে।
এনবিআর বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের জুন মাসে কেবল বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটি বাংলাদেশ) ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ১৬৯ কোটি টাকা। শুধু এই অর্থবছর নয়, গত চার অর্থবছর একইভাবে বিএটি প্রায় ৩৭৯ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ইতোমধ্যে যাচাই শেষে এই ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। একইভাবে আরেক বহুজাতিক কোম্পানি জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) বাংলাদেশ ফাঁকিও উদ্ঘাটিত হয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, সিগারেট কোম্পানিগুলো বিশেষ করে বিএটি বাজেটের কয়েক মাস আগ থেকে সিগারেট উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। চাহিদার অতিরিক্ত সিগারেট মজুদ করা হয়। পুরনো দাম ও পুরনো প্যাকেটের সেই সিগারেট বাজেটে দাম বাড়ার পর তা বাজেটের পরপরই বাজারে ছাড়া হয়। এই নিয়ে এনবিআর কোন উদ্যোগ নেয় না। এই নিয়ে ২৭ জুন দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় এক চিঠিতেই বিএটির পকেটে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব!-শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে নড়েচড়ে বসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এনবিআরের নির্দেশে এলটিইউ এই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই শুরু করে। পরে এর সত্যতা পায়। কেবল জুন মাসে বিএটির প্রায় ২১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং জেটিআই এর প্রায় ১৩ কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। যদিও পরে যাচাই শেষে বিএটির ফাঁকি প্রায় ১৬৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। ইতোমধ্যে দুইটি কোম্পানিকে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিএটি ও জেটিআই এর ফাঁকি উদ্ঘাটিত হওয়ায় বিগত অর্থবছরগুলোতে একই কায়দায় ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব হিসাব শুরু করে এলটিইউ। যাচাইয়ে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএটি পুরনো প্যাকেটের সিগারেট নতুন দামে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছর প্রায় ৫৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছর ৬৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। বিদায়ী অর্থবছর ১৬৯ কোটি টাকা ছাড়াও আগের তিন অর্থবছরের (২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩) এর মোট ২১১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ১৯ ডিসেম্বর বিএটিকে আলাদা তিনটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রাজস্বের ২১০.৮৬ কোটি টাকা ‘বিএটির’ পকেটে
রাজস্বের ১৩.২৫ কোটি টাকা জেটিআই’র পকেটে