ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে লিজ চুক্তি নবায়নের বিষয়ে করা আপিল সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ার পর, দেশের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক সিগারেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশকে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত তার প্রধান কার্যালয় ও কারখানার জায়গা খালি করে দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ গতকাল (২৯ মে) লিজ সংক্রান্ত বিরোধে হাইকোর্টের পূর্বের এক আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিএটির করা আপিল খারিজ করে দেন।
এর আগে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টও মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার জমির লিজ চুক্তি নবায়নে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোম্পানির করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।
বিএটি বাংলাদেশের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৪ সাল থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড থেকে কারখানার জায়গা লিজ নিয়ে পরিচালনা করছে। প্রতি লিজ চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৯০ বছর পর্যন্ত নবায়নের সুযোগ ছিল। বিএটি বাংলাদেশ বাকি ৩০ বছরের লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড সেটি প্রত্যাখ্যান করায় কোম্পানিটি চুক্তিগত অধিকার নিয়ে আইনি লড়াই শুরু করে।
পরিবেশবাদীরা পরিবেশ দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বহুবার মহাখালী থেকে এই কারখানা সরানোর দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেছেন। বর্তমানে বিএটি বাংলাদেশের তিনটি কারখানা রয়েছে—মহাখালী, সাভার ও মানিকগঞ্জে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি কারখানা (গ্রিন লিফ ট্র্যাশ প্ল্যান্ট) রয়েছে। বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কারখানা স্থাপিত হয় ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান টোব্যাকো কোম্পানি মহাখালীতে তার দ্বিতীয় কারখানা গড়ে তোলে।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশ ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা আয় করেছে, যদিও সিগারেট বিক্রি অনেক কমেছে। অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, কোম্পানিটির নিট মুনাফা ২৩ শতাংশ কমে ৩১৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে গত বছর এটি ছিল ৪১৩ কোটি টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমে ৫.৮৯ টাকা হয়েছে। গত বছর বিএটি বাংলাদেশ ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল। ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মোট আয় ছিল ৪৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।