ভারতে পলাতক সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সহচর হিসেবে পরিচিত কয়েকজন আমলার (সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই সাবেক সরকারের সময় একাধিক বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার রক্তাক্ত অভুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার পতনের পর প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এক পর্যায়ে সাবেক সরকারের দোসর হিসাবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া ছাড়াও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত হিসাবে বদলি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।
তালিকায় ২২ জন : প্রথম দফায় ২২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এরা হলেন, সাবেক সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, আবু হেনা মোরশেদ জামান, কামরুল হাসান, অতিরিক্ত সচিব হামিদুল হক, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, ওয়াহিদুল ইসলাম, এসএম আলম, এনামুল হাবিব, শওকত আলী, রাব্বি মিয়া, ফয়েক আহমেদ, উম্মে সালমা তানজিয়া, সুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ মাসুদ করিম, কামরুন নাহারা সিদ্দিকা, আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদাওস খান, তোফায়েল ইসলাম, আহমেদ কবির, সায়লা ফারজানা এবং তন্ময় দাস।
সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাসপোর্ট অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী আরিফুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পাসপোর্ট অর্ডার ১৯৭৩ এর ৭ (২)(সি) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২২ বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট বাতিল এবং তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
সূত্র জানায়, পাসপোর্ট বাতিল হওয়া কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই স্বৈরাচার সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় একদলীয় নির্বাচনের মতো পরিস্থিতিতে তারা ব্যাপক ভোট কারচুপিতে জড়িত ছিলেন। পরে তাদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয়।
পাসপোর্ট বাতিল হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আহমেদ কবির জামালপুর, মোখলেসুর রহমান গোপালগঞ্জ, হামিদুল হক ঝালকাঠি, ওয়াহিদুল ইসলাম মাদারিপুর, আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদাউস খান মানিকগঞ্জ, সুভাস চন্দ্র বিশ্বাস ময়মনসিংহ, রাব্বি মিয়া নারায়ণগঞ্জ, ফয়েজ আহাম্মদ বগুড়া, সায়লা ফারজানা মুন্সীগঞ্জ, উম্মে সালমা তানজিয়া ফরিদপুর, এবং দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির গাজীপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের দায়িত্বকালীন সময়ে এসব জেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।