কমছে বাজেটের আকার, বাড়ছে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ঘাটতি কম রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে নজিরবিহীন আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বাজেটের আকার কমলেও বাড়ছে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে সরকার। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমাদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব-ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেট তেমন বড় করা হচ্ছে না। এ কারণেই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা। অহেতুক উচ্চাভিলাষী নয়; বরং একটি বাস্তবভিত্তিক বাজেটের দিকেই এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
Budget
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২ জুন (সোমবার) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘোষণা করবেন। প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবারকে বাজেট ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এবারই তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। তবে বাজেট ঘোষণার পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়েবাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন ঠিকই করবেন অর্থ উপদেষ্টা।

জানা গেছে, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা বাজেট উপস্থাপন করে থাকেন জাতীয় সংসদে। সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে ঋণের অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার। এদিকে নতুন অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস এর চেয়ে অনেক কম।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য রাজস্ব আহরণে আমাদের ওপর চাপ বাড়ছে। রাজস্ব বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের যৌক্তিকভাবে কর বাড়াতে হবে। বাজেট লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, এবার তেমনটি হবে না। সিগনিফিকেন্ট বাজেট হবে।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া বেশির ভাগ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছরে প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে এডিপির আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

বাজেট সংক্রান্ত আরো নিউজ পড়ুন-
** ২ জুন বাজেট ঘোষণা দেবে সরকার
** আগামী অর্থবছরের বাজেট ৭.৯০ লাখ কোটি টাকার
** বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চান ব্যবসায়ীরা
** বাজেটে জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর কমেতেছে!
** অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে আসছে বাজেট
** এবারের বাজেট নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
** ‘আগামী বাজেটে করপোরেট করহার ‘রিভিজিট’ করা হবে’
** অর্থসংকটে আগামী বাজেট না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
** আগামী বাজেট: ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা
** আগামী বাজেটে গুরুত্ব পাবে তিন খাত
** আগামী বাজেটে কর কাঠামো যৌক্তিক করা হবে
** বাজেট প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের মতামত চাইল এনবিআর
** বিনিয়োগ বান্ধব করনীতি চায় বিজিএমইএ-বিকেএমইএ
** ‌‘করপোরেট বা অন্য খাতে কর কমানোর সুযোগ নেই’
** ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা পান
** রিটার্ন না দিলে ব্যাংক হিসাব তলব হবে: চেয়ারম্যান
** লক্ষ্য কমিয়ে সমঝোতার পথে এনবিআর
** করের আওতা বাড়াতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা
** রাজস্ব হ্রাস ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ
** করের আওতায় আসবে রাজনৈতিক দল!
** কালো টাকার সুযোগ থাকলেও ট্যাক্স বাড়বে
** করনীতি সংস্কারের প্রস্তাব ব্যবসায়ী নেতাদের
** তামাক কর সংস্কারে ২০ হাজার কোটি টাকা আসবে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!