বাজার নিয়ন্ত্রণ: চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় চায় মন্ত্রণালয়

দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় বন্যা চলমান রয়েছে। বন্যা-পরবর্তী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর গড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। সে জন্য চাল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য রয়েছে। এই শুল্ককর ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান সই করা এই চিঠি দেয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, মাস দুয়েক আগে ছাত্র আন্দোলনের সময় চালের বাজার বেশ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এরপর আর কমেনি দর। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মাঝারি আকারের তথা বিআর-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায়। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে মনে করেন মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, এতে আমদানি বাড়বে। বাজারে চালের দরও কমে আসতে পারে।

অপরদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন করা ও পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্যের নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দেয়ার জন্য চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান এবং ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি সংরক্ষণাগারে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল এবং ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গমসহ মোট ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। তবে বন্যা-পরবর্তীতে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দর বেড়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং ও অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবু খাদ্যশস্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সম্প্রতি দেশের ১৪টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ফলে আউশ, রোপা আমন এবং আমনের বীজতলার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাতে আমন ওঠার পরও চালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। ভারত সরকার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের আমদানি কমে যাওয়া ও বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে চালের বাজার স্থিতিশীল ও সরকারি নিরাপত্তা মজুত বাড়ানো দরকার। সে জন্য বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির প্রয়োজন হতে পারে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের মূল্য দেশীয় বাজারের চেয়ে বেশি। সে কারণে বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক (কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ৫ শতাংশ, অ্যাডভান্স ট্যাক্স ৫ শতাংশ, ইন্স্যুরেন্স ১ শতাংশ ও ল্যান্ডিং চার্জ ১ শতাংশ ও ডিএফ ভ্যাট ০.৫ শতাংশ) ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুধু রেগুলেটরি ডিউটি ৫ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা যায়। আরও বলা হয়, সম্প্রতি ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে করে চাল রপ্তানির ওপর ভারতের ১০ শতাংশ ও আমদানির ওপর বাংলাদেশের ৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়ে মোট ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে হবে। তাতে আমদানিকারকরা অভ্যন্তরীণ চাহিদা থাকায় চাল আমদানিতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ও নন সেন্টেড আতপ চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এইচআর খান পাঠান সাকি বিজনেস বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি বন্যায় ধানের ফলন ব্যাহত হয়েছে। তাতে বাজার কিছুটা বাড়তি। এ পরিস্থিতিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগটি অবশ্যই উত্তম সিদ্ধান্ত। শুল্ক কর কমানোর কারণে আমদানিকারকরা চাল আমদানিতে উৎসাহী হবেন। তাতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শুল্ককর কমানোর পরও অনুমতি নিয়ে অনেকেই শেষ পর্যন্ত চাল আমদানি করে না এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন বিশ্ববাজারে বিশেষ করে ভারতে চালের দর বেড়ে যায় তখন আমদানি করতে চান না ব্যবসায়ীরা। কারণ বেশি দরে আমদানি করলে তা দেশের বাজারে বিক্রি করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে বলেন, চিঠি পাওয়ার পর শুল্ককর কমানোর বিষয়টি এনবিআর পর্যালোচনা করছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!