রোজা শুরু হতে ৯ দিন বাকি, এর মধ্যে ছোলার সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। তবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায়, গতবারের তুলনায় এবার কিছুটা বেশি দামে ছোলা কিনতে হবে।ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে রোজায় ছোলার চাহিদা এক লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত আড়াই মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, রোজার মাস ছাড়া অন্য মাসগুলোতে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। সেই হিসাবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসের ৩০ হাজার টন চাহিদা বাদ দিলেও আমদানি করা আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টন ছোলার সরবরাহের জন্য অবশিষ্ট থাকবে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানির বৃদ্ধির কারণ হলো, রমজান সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় আটটি খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দেয়। এর মধ্যে ছোলা, ডাল ও মটর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সুবিধা পেয়ে অনেক আমদানিকারক ছোলা আমদানিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ছোলা আমদানিকারক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, রোজার আগে আমদানি করা আরও ছোলার চালান দেশে এসে পৌঁছাবে। তাই এবার ছোলার সরবরাহ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আবার সরবরাহ–সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানোর সুযোগও কম।
আমদানির তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে আমদানি করা ছোলার ৯৬ শতাংশই আনা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। বাকি ছোলা আমদানি করা হয়েছে ভারত থেকে। গড়ে কেজিপ্রতি ছোলা ৭২ সেন্টে আমদানি করা হয়। তবে মানভেদে আমদানি খরচ ছিল ৬৮ সেন্ট থেকে ৮৮ সেন্ট পর্যন্ত।
খাতুনগঞ্জে রমজানের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারটি পরিদর্শন করে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর এ সময়ে পাইকারিতে ছোলার দাম ছিল ৮০ থেকে ৯৬ টাকা প্রতি কেজি। তবে এই মাসে দাম বেড়ে ৯২ থেকে ১০৫ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে। বেশি আমদানির পরও দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলারের বিনিময়মূল্যের বৃদ্ধি ও আমদানির খরচ বাড়ার কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।
রমজান আসতে চলেছে, আর চট্টগ্রামের খুচরা বাজারগুলোতে ছোলার সরবরাহ শুরু হয়ে গেছে। রোজায় দাম বাড়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগে পণ্য কিনে রাখছেন। তবে এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ভোক্তাদের মনে প্রশ্ন, রোজার সময় কি এসব পণ্যের দাম নতুন করে বাড়বে?
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রোজার আগে ছোলার দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা রোজা শুরুর পর ৭০ টাকায় নেমে আসে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের রোজায় ছোলার দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এ বছরও রোজার সময় ছোলার দাম খুব বেশি বাড়বে না। বহদ্দারহাট বাজারের খুচরা বিক্রেতা মুহাম্মদ ফরিদুল হক জানান, রোজার আগে ছোলার দাম সাধারণত কিছুটা কমে থাকে এবং এবছরও এমনটা হতে পারে।
**রোজার আগে ছোলা-খেজুর বিক্রি শুরু টিসিবির