হোল্ডিং ট্যাক্স তথা গৃহকর পরিশোধ করছে না বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক। পাশাপাশি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গৃহকর ফাঁকির অভিযোগও উঠেছে। চট্টগ্রাম মহানগরে স্থাপিত মোবাইল ফোন টাওয়ারের বিপরীতে তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর পরিশোধ করছে না বাংলালিংক।
তথ্যমতে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরসহ তিন অর্থবছরে বাংলালিংকের কাছে চসিকের পাওনা প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে এ পর্যন্ত কতটি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে, তার সঠিক তথ্যও দেয়নি কোম্পানিটি। এতে করে সঠিক করের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারছে না চসিক। এর মাধ্যমে বাংলালিংক বিপুল অঙ্কের গৃহকর ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চসিক। অন্যদিকে, বকেয়া কর পরিশোধের বিপরীতে সারচার্জ মওকুফের শর্ত দিয়েছে বাংলালিংক। চসিক বলছে, হাল ও বকেয়া কর পরিশোধসাপেক্ষেই কেবল সারচার্জ মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
চসিকের রাজস্ব বিভাগ জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম মহানগরে বাংলালিংকের ২২৫টি টাওয়ার ছিল। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরসহ তিন অর্থবছরে বাংলালিংক থেকে গৃহকর বাবদ চসিকের পাওনা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪০ টাকা। এর মধ্যে বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৮১ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা ও সারচার্জের পরিমাণ ১২ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৯ টাকা।বাংলালিংকের কাছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চসিকের পাওনা ছিল ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪২৬ টাকা। এর মধ্যে বকেয়ার পরিমাণ ৪০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৭ টাকা ও সারচার্জের পরিমাণ ছয় লাখ আট হাজার ৯২৪ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও পাওনা ছিল ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪২৬ টাকা। এর মধ্যে বকেয়া ৪০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৭ টাকা ও সারচার্জ ছয় লাখ আট হাজার ৯২৪ টাকা। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চসিকের পাওনা আছে ৪০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৭ টাকা।
জানা যায়, প্রতি অর্থবছরেই গৃহকর পরিশোধের জন্য মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয় চসিকের রাজস্ব বিভাগ। যথারীতি চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরেও বকেয়া ও হালকর পরিশোধে বাংলালিংককে চিঠি দিয়েছে চসিক। জবাবে গত ২৯ আগস্ট চসিককে ফিরতি চিঠি দিয়েছে বাংলালিংক কমিউনিকেশন লিমিটেডের হেড অব স্টেকহোল্ডার রিলেশন্স এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস (রুশো)।
চিঠিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোবাইল টাওয়ার হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের সুবিধার্থে সারচার্জ মওকুফের আবেদন করেছেন এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস। এর জবাবে চসিক বাংলালিংককে জানিয়েছে, হাল ও বকেয়া কর পরিশোধ করলে সারচার্জ মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আগে হাল ও বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে।
চসিকের গৃহকর বকেয়া থাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলালিংক কমিউনিকেশন লিমিটেডের কর্মকর্তা এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস (রুশো) বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় বাড়িওয়ালা। চুক্তি করার সময় আমরা বাড়িওয়ালাকে বলে দিই গৃহকরটা তারাই পরিশোধ করবে। এ ব্যাপারে আমরা সব বাড়িওয়ালাকেই তাগাদা দিয়েছি। আশা করি, এ মাসের মধ্যে চসিকের পাওনা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, ‘বাংলালিংকের কাছে আমাদের গৃহকর বকেয়া আছে। তবে তারা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে।’
চসিকের রাজস্ব বিভাগ বলছে, ‘বাংলালিংকের বকেয়া কর পেলে চসিকের সুবিধা হতো। আগে পরিশোধ করলেও তিন বছর ধরে নিয়মিত গৃহকর পরিশোধ করছে না তারা। তারা সারচার্জ মওকুফ চাচ্ছে। হাল ও বকেয়া কর পরিশোধ না করলে তা মওকুফের সুযোগ নেই। আমরা বাংলালিংককে জানিয়েছি, আগে বকেয়া পাওনা পরিশোধ করুন, অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় অনুমোদনসাপেক্ষে সারচার্জ মওকুফ করা হবে।’
এদিকে, চসিকের রাজস্ব বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘বাংলালিংক চট্টগ্রাম মহানগরে কতটি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করেছে এবং কি পরিমাণ ভাড়া পাওয়া যায়, তার কোনো চুক্তিনামা ও মোবাইল টাওয়ারের তালিকা প্রদান করেনি বিধায় প্রকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সের হিসাব নির্ণয় করা যাচ্ছে না।’যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর চট্টগ্রামে বাংলালিংকের আর কতটি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি হাসিনুল কুদ্দুস। যদিও এ সময়ের পর চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবার (ফোরজি) লাইসেন্স নেয় দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটর। ফোরজির নেটওয়ার্কও বিস্তার করা হয় এরপরই।