দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকেই জানেন না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার প্রায় অর্ধেকই প্রাপ্তবয়স্ক নারী।
দেশের হরমোন বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর ২-৩ শতাংশের বয়স ১৬ বছরের কম, যা প্রায় চার লাখ মানুষ। এদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পালিত হয়েছে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস।
প্রতিবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডায়াবেটিস: ঝুঁকি জানুন, শনাক্ত করুন, পদক্ষেপ নিন’। হরমোন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে, এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম বয়সীদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি।
অথচ তাদের হওয়ার কথা টাইপ-১ ডায়াবেটিস। বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা-ই আছে।ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের প্রধান কারণ তিনটি। এক. বংশগত, দুই. গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস থাকা এবং তিন. কম বয়সে ওজন বেড়ে যাওয়া।আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর প্রায় অর্ধেকই নারী।এর মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাঁদের ৬৫ শতাংশ পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিস প্রধানত টাইপ-১ ও টাইপ-২ এই দুইভাবে আমরা ভাগ করি। আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ধরনের। টাইপ-১ হচ্ছে যাদের শরীরে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না। তাদের ইনসুলিন বা পুরোপুরি ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয়। সে জন্য সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবে টাইপ-২ ধরনের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ঠেকিয়ে রাখা বা বিলম্বিত করা সম্ভব।’
চিকিৎসকদের মতে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত বেশি বয়সী শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়, যাদের ওজন বেশি, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে, এবং যারা কায়িক পরিশ্রম করে না। তবে, এই রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বা কিছু ওষুধের প্রভাবেও ডায়াবেটিস হতে পারে। মেদবহুল, স্থূল শিশু, ঘাড়ের ত্বকে কালো দাগ বা কিশোরীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা থাকে।
বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান বলেন, ২০ বছর আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স ছিল ৫০ বছর, তবে এখন তা ৩৫ বছরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ৭%, এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সে তা ৪%। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, এবং এর ফলে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।