বাংলাদেশে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ৭৯.৬ ডলার

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ঋণের বোঝায় শীর্ষে রয়েছে। দেশের কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক মাত্রার মাত্র ০.৫ শতাংশ হলেও বর্তমানে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ ৭৯.৬ মার্কিন ডলার, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ‘জলবায়ু ঋণ ঝুঁকি সূচক-২০২৫’ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান এবং ফলাফল উপস্থাপন করেন সহ-গবেষক তন্ময় সাহা।

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য জলবায়ু ঋণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে, এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু অর্থায়নের ৭০ শতাংশেরও বেশি ঋণ হিসেবে আসছে, যা সংকটাপন্ন দেশগুলোকে দ্বিগুণ ক্ষতির মুখে ফেলছে। দেশগুলো একদিকে জলবায়ুঘটিত বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণের ক্রমবর্ধমান কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে আবারও আর্থিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু অর্থায়নে বাংলাদেশের ঋণ-অনুদান অনুপাত দুই দশমিক সাত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) তুলনায় তা প্রায় চারগুণ (শূন্য দশমিক সাত) বেশি। এছাড়া, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) থেকে নেওয়া বাংলাদেশের ঋণের অনুপাত শূন্য দশমিক ৯৪, যা বৈশ্বিক গড় শূন্য দশমিক ১৯-এর প্রায় পাঁচগুণ বেশি।

গবেষণায় জানানো হয়, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এতকিছুর পরও জলবায়ু অভিযোজন খাতে সহায়তা নগণ্য। দেশের পরিবারগুলো জলবায়ুঘটিত বিপর্যয় থেকে সুরক্ষার জন্য নিজেদের অর্থায়নে প্রতি বছর মাথাপিছু গড়ে ১০ হাজার ৭০০ টাকা (প্রায় ৮৮ মার্কিন ডলার) ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে, যা জাতীয় পর্যায়ে বার্ষিক ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমে। কিন্তু কপ-এর মতো বৈশ্বিক ফোরামের বাস্তব ফল কম, ফলে মানুষ ঝুঁকিতে থাকে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়ে উল্লেখিত অসম কার্বন নিঃসরণ প্রশ্নে বাংলাদেশকে সাড়া দিতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ও এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রিনস্পিকার ফারিয়া হোসাইন ইকরা বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু অর্থায়ন পাওয়া আরও কঠিন হবে। বড় নিঃসরণকারীদের জবাবদিহিতে আনতে ও প্রাপ্য সহায়তা আদায়ে আইসিজের পরামর্শমূলক মতামত কীভাবে আইনি হাতিয়ার হতে পারে, এটা খুঁজে দেখা দরকার।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব কাজী শাহজাহান বলেন, জলবায়ু বিষয়টি বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি ও মানব আচরণের সঙ্গে জড়িত। কার্যকর অর্থায়নের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা বোঝা, বৈশ্বিক উন্নয়ন কাঠামো থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং তথ্য ও সম্পদের কৌশলী ব্যবহার করে স্থানীয় সক্ষমতা তৈরি করা জরুরি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!