বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

গত দুই দশকে প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশ। বিনিয়োগও নেমে এসেছে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এমন হতাশাজনক পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে, পরবর্তী দুই অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আবার বাড়বে—২০২৫–২৬ অর্থবছরে তা দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে এবং ২০২৬–২৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছাবে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং মূলধনি পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এসব কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে এর আগে সর্বশেষ ২০১৯–২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ শতাংশের নিচে নেমেছিল। ওই বছর কোভিড–১৯ মহামারির প্রভাবে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশে। তবে সেই ব্যতিক্রমী অর্থবছরটি বাদ দিলে, এর আগের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০০১–০২ অর্থবছরে, ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলধনি পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের শিল্প খাতে গতি মন্থর হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি এখনও ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। যদিও কয়েকবার সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, তবু মূল্যস্ফীতি এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার নিচে নামেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে সাম্প্রতিক সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমেছে এবং তা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে। এতে নীতি সুদহার কমানোর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ভারতে ২০২৩ সালের শুরু থেকে অপরিবর্তিত থাকা সুদের হার ২০২৫ সালের শুরুতে কমিয়ে আনা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভুটান ও নেপালে উন্নয়ন ব্যয় বাড়বে, তবে বাংলাদেশে এই খাতে ব্যয় কমতে পারে। ঘাটতি মেটাতে চলতি ব্যয় ও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এ সময় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। শিল্প খাতে কিছুটা উন্নতি হলেও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু আয়ের ইতিবাচক প্রবণতা

বিশ্বব্যাংকের মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে স্থিতিশীল থাকতে পারে, যা এই অঞ্চলে দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক হবে। তবে ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশকে বাদ দিলে, অন্যান্য দেশের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি ২০২৫ সালে ২.১ শতাংশ থেকে ২০২৭ সালে ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার করোনা-পূর্ব দশকের তুলনায় কম থাকবে, যার ফলে এসব দেশে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হবে। আফগানিস্তানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপক থাকবে এবং বৈদেশিক সাহায্যের কমতি পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

নেপাল ও ভুটানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরগুলোতে নেপাল ও ভুটানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। নেপালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। হাইড্রোপাওয়ার উৎপাদনের উন্নতির কারণে নেপালের শিল্পোৎপাদন বাড়বে এবং ভারতসহ প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি সম্ভব হবে। ভুটানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাস থেকে ১ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধির মূল কারণ হবে নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, যা দেশের বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!