বাংলাদেশি পণ্যে এখন মোট শুল্কহার কত হবে

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা বসানোর ফলে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ককহার বাড়বে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যে ‍পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৭ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে, সেগুলোতে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছিল। তবে পোশাক রপ্তানিতে কার্যকর গড় শুল্কহার ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নতুন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যে কার্যকর গড় শুল্কহার হবে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে পোশাক খাতে অনেক পণ্য রয়েছে। তাই একেক পণ্যে একেক শুল্কহার হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী, মানবতন্তু বা ম্যান মেইড ফাইবার দিয়ে তৈরি সোয়েটারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের জন্য এই শুল্কহার প্রযোজ্য। এখন এই পণ্য রপ্তানি করলে পাল্টা শুল্ক যুক্ত হয়ে মোট শুল্কহার হবে ৫২ শতাংশ। আবার তুলার সুতা দিয়ে তৈরি সোয়েটারে এখন শুল্কহার ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশে। সুতার কাপড়ে তৈরি ছেলেদের আন্ডারপ্যান্টে এখন শুল্কহার প্রায় ৬ শতাংশ। নতুন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে দিতে হবে ২৬ শতাংশ। পোশাক খাতে কিছুসংখ্যক পণ্যে ১ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে, সেগুলোতে দিতে হবে ২১ শতাংশ।

পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে জুতা রপ্তানিতে গত বছর কার্যকর গড় শুল্কহার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে কার্যকর গড় শুল্ক দাঁড়াতে পারে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই খাতে পণ্যভেদে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে। হ্যাটস ও হেডগিয়ার রপ্তানিতে কার্যকর গড় শুল্ক রয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে শুল্কহার বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। এই খাতের পণ্যভেদে শূন্য থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। চামড়াজাত পণ্যে গত বছর কার্যকর গড় শুল্কহার ছিল ১২ দশমিক ২০ শতাংশ। এখন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তার হার বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ দশমিক ২০ শতাংশে। চামড়ার পণ্যভেদে শূন্য থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। চামড়া খাতের একটি পণ্য হলো চামড়ার হাতব্যাগ। পণ্যটি রপ্তানিতে এখন শুল্কহার ৯ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এই পণ্যে মোট শুল্কহার বেড়ে দাঁড়াবে ৩১ শতাংশে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ শিডিউলে তিন ধরনের শুল্কহার রয়েছে। একটি হলো, এমএফএন (মোস্ট ফেডারড নেশন) শুল্কহার। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি পণ্যে এই শুল্কহার প্রযোজ্য। সাধারণত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্যদেশগুলো এই সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর এমএফএন শুল্কহার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। এসব পণ্যের ওপর দেশটি শুল্ক আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে পণ্যভেদে কার্যকর শুল্কহার ভিন্ন ভিন্ন হবে। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি পণ্যভেদে নানা হারে শুল্ক আদায় করে। অর্থাৎ একেক পণ্যের ওপর শুল্কহার একেক রকম। দেশটি পণ্যভেদে শূন্য থেকে ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আদায় করে আসছে এত দিন। পাল্টা শুল্কে তা-ও পাল্টে যাচ্ছে এখন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, পাল্টা শুল্ক আরোপ করে তারা সেটি কমাতে চায়। আর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ সরকার। যা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে সরকার। চূড়ান্ত দফার আলোচনার সময় বেসরকারি খাতের চুক্তিও সই হয়েছে। মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ১৩০ মিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানির চুক্তি সই করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশি আমদানিকারকরা ৩০-৩৫ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন তুলা আমদানির চুক্তি করেছেন।

** বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ যুক্তরাষ্ট্রের

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!