বাঁধের ১৭ স্থান ভাঙনে ৩০ গ্রাম প্লাবিত, যোগাযোগ বন্ধ

টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৭টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে ওই দুই উপজেলায় ইন্টারনেট ও মোবাইল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি, ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ওপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় মঙ্গলবার রাত থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, যার ফলে পরশুরাম উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে, মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়, যা ফেনীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফেনীসহ আশেপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

Feni 1

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সীমান্তবর্তী মুহুরী নদীর পানি বুধবার বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ১৩.১৫ মিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপরে অবস্থান করছিল। তিনি জানান, গত দুই দিনে তিনটি নদীর বেড়িবাঁধের অন্তত ১৭টি স্থানে ভাঙন ধরা পড়ে, যার ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। এতে পানিবন্দি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তাদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।

Feni 2

ফেনী থেকে পরশুরামগামী যাত্রী জাহানারা ফেরদৌস জানান, তার বৃদ্ধ মা একা বাড়িতে রয়েছেন, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সকালে ঢাকা থেকে ফেনী আসতে পেরেছেন, কিন্তু পরশুরামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাড়িতে যেতে পারছেন না। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি।

ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নুরুল ইসলাম জানান, ঘরে গলা পর্যন্ত পানি উঠায় তিনি স্ত্রীসহ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। হঠাৎ পানি বাড়ায় তিনি দুটি গরু রক্ষা করতে পারলেও হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। সন্তান না থাকার পাশাপাশি বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে সব মালামাল নষ্ট হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই দম্পতি।

Feni 3

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিয়া ইসলাম জানান, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ফুলগাজী উপজেলার সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পরশুরাম উপজেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ছয়টি, কহুয়া নদীর তিনটি এবং সিলোনিয়া নদীর একটি স্থানে ভাঙন হয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

Feni 4

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তৎপরতা বজায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে ১২০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!