## জব্দ করা দুই কনটেইনারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা শুল্ককর ফাঁকির চেষ্টা
## জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদসহ তিনজন গ্রেফতার
বার্তা প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর থেকে এক কনটেইনার মদ জব্দ করা হয়েছে। রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা চালানটি জব্দ করেন। কাস্টমস গোয়েন্দার লক করা চালানটি নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠান সুতা ঘোষণা দিয়ে এই মদ আমদানি করেছে। তবে এর আগে শুক্রবার ভোরে নারায়নগঞ্জ থেকে মদ ভর্তি দুইটি কনটেইনার জব্দ করা হয়। যাতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আইপি জালিয়াতি করে আমদানি করা এই মদ আমদানি চক্রের অন্যতম হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেটের ‘ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিডি’ নামের একটি কোম্পানি চীন থেকে চালানটি আমদানি করে। ১৬ জুলাই এটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। চালানটি খালাসের জন্য ২০ জুলাই বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাফর আহমেদ। পলিস্টার টেক্সচার্ড সুতা ঘোষনায় চালানটি আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু গোপন সূত্রে কন্টেইনারে মদ থাকার সংবাদ পেয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও এআইআর শাখা চালানটি লক করে দেয়। গতকাল কনটেইনার খুলে বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ পাওয়া যায়। মদ ইনভেন্ট্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক বলেন, ‘বন্দরের ভেতর থেকে এক কন্টেইনার মদ জব্দ করা হয়েছে। কন্টেইনারটিতে ইনভেন্ট্রির কাজ চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ করতে একটু বিঘ্ন ঘটছে।’ অপরদিকে, কাস্টমস গোয়েন্দার উপপরিচালক শেখ মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘একই সিএন্ডএফ এজেন্ট জাফর আহমেদ কর্তৃক ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিডি এর দাখিল করা বিল অব এন্ট্রি কাস্টমস গোয়েন্দা লক করে। পরবর্তীতে তা পরীক্ষণ করা হচ্ছে। পরীক্ষায় বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
অন্যদিকে, কাস্টম হাউস থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ হতে মদভর্তি দুটি কনটেইনার জব্দ করেছিল কাস্টমস কর্মকর্তারা। যাতে কায়িক পরীক্ষায় এক হাজার ৩৩০ কার্টনে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার মদ পাওয়া গেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এতে প্রায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার শুল্ককর ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে।
অপরদিকে, শুক্রবার জব্দ করা মদ আমদানি চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশী মদ জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ মদের সবচেয়ে বড় চালান এটি। চক্রটি এর আগেও দুবাই থেকে ৩টি চালানে প্রায় ১৪ হাজার বোতল মদ এনেছে। এসব মদ তারা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে সরবরাহ করত। গতকাল কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, শনিবার র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জে আভিযান চালিয়ে মালবাহী দুটি কন্টেইনার জব্দসহ দুজনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন নাজমুল মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম। এছাড়া তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, এই মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আহাদ এবং মিজানুর রহমান আশিক সম্পর্কে সহোদর এবং এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা উভয়ের পিতা আজিজুল ইসলাম। তারা এক বছর ধরে এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত। তারা সিঅ্যান্ডএফের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এই অবৈধ মাদক আমদানি কার্যক্রম করে থাকে। এই অবৈধ মাদক আমদানির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজপত্র ব্যবহার করে। চক্রটি দেশে টিভি ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিপণন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অবৈধ মাদক বিদেশ থেকে আনার পরে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, রাজধানীর বংশাল ও ওয়ারীতে ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে এসব অবৈধ মাদক বিপণন করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবহনকৃত কন্টেইনার হতে সরাসরি ক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করে।