বন্দরের ‘ক্ষমতাধর’ সাইফ পাওয়ারটেক

সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড শুরুতে চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকেছিল কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নিয়োজিত যন্ত্রপাতি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সেই প্রতিষ্ঠানটিই এখন বন্দরের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একে একে বাগিয়ে নিয়েছে সিসিটি এবং এনসিটির টার্মিনাল পরিচালনার কাজ। প্রতিষ্ঠানটিকে এখন অনেকে বন্দরের সুপার পাওয়ার হিসেবেও অভিহিত করেন।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, বন্দরে টার্মিনাল অপারেটররা নিজেদের যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এমন নিয়ম নেই। সেই সুবাদে বন্দরের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে সাইফ পাওয়ারটেক। অর্থাৎ পুঁজি বন্দর কর্তৃপক্ষের, আর মধুর ভাগ সাইফের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন। দেশের অন্য বন্দরগুলোতেও রয়েছে তার প্রভাব। এ ছাড়া বিদেশে ব্যবসার নামে অর্থ পাচার, নন বাইন্ডিং চুক্তির ছদ্মাবরণে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো নানা অভিযোগও উঠেছে তার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

২০০৬ সালের আগে জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের কাছ থেকে চারটি রেল মাউটেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। মাউটেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের স্থানীয় এজেন্ট ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। এর মধ্য দিয়েই সাইফ পাওয়ারটেকের মধু খাওয়া শুরু। অবশ্য, মধুর ভাগ খাওয়ার আগে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ১২টি শর্ত পরিবর্তন করিয়ে আইনি বাধা অতিক্রম করেছে তারা নিজেদের ‘ক্ষমতা’ কাজে লাগিয়ে। সিসিটি পরিচালনায় বন্দরের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সাইফ পাওয়ারটেককে বিশেষ সুবিধা দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজদের আইন পরিবর্তন করেছিল!

শুধু কি তাই, ২০০৬ সালে বন্দরের মাত্র ১৫০ টাকা হারে টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজের জন্য দরপত্র দাখিল করে এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সর্বনিম্ন দরদাতা এই প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ না পেলেও উচ্চমূল্যে কাজটি বাগিয়ে নেয় সাইফ পাওয়ারটেক। এখন প্রতি টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য চার্জ নেওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা হারে। সাইফ পাওয়ারটেকের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ২ কোটি ১০ হাজার ৭৩৯ টিইইউএস। কয়েক বছর আগে এই হার ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে চার্জ কমাতে বাধ্য হয়েছিল প্রতিষ্ঠান। বর্তমান চার্জ অনুযায়ী ১৭ বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাবদ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে প্রতি টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বাড়তি নেওয়া হয়েছে ৭৫০ টাকা হারে। সেই হিসাবে শুধু কন্টেইনার হ্যান্ডলিং থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি আয় করেছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ তো গেল শুধু কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বাড়তি চার্জের হিসাব। এর বাইরেও প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে সুবিধা নিয়েছে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। শুরুটা যন্ত্রপাতি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে হলেও পরবর্তীকালে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ রয়েছে, এই কাজে তাদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন, সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল হক। সাইফ পাওয়ারটেক ২০১৫ সালে বাগিয়ে নেয় এনসিটি টার্মিনালের চারটি জেটির কাজ। এই কাজ পাওয়ার পরই বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) পদ্ধতিতে প্রতি বছর অন্তত ৭০ শতাংশ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। অভিযোগ আছে, লোপাটকৃত অর্থের ভাগ পান আলোচিত রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

রূপবদল

বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে সাইফ পাওয়ারটেক বন্দরে প্রবেশ করে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে যন্ত্রপাতি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এসময় তারা সখ্য গড়ে তোলে তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের সঙ্গে। ওই সময় বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অস্থিরতা চলত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেসরকারি অপারেটর বনে যায় সাইফ পাওয়ারটেক। এরপর এক-এগারোর সরকারের সময়েও কৌশলী অবস্থানে থেকে প্রতিষ্ঠানটি কাজ চালিয়ে নেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই তরফদার মো. রুহুল আমিন মুহূর্তেই রূপ পাল্টিয়ে হয়ে যান আওয়ামী লীগের লোক। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাজে লাগিয়ে প্রতাপের সঙ্গে বন্দরে কাজ করতে থাকেন।

আবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন রুহুল আমিন তরফদার দাবি করছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক। তরফদারের দাবি, সাইফ পাওয়ারটেককে হটিয়ে দিতে সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ব্যবহার করে তার মনোনীত দুবাইভিত্তিক দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড নামক প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম বন্দরে সিসিটি এবং এনসিটি হস্তান্তরের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছিলেন। আর দুই মাস সময় পেলেই সাইফ পাওয়ারটেককে আউট করে দিতেন সালমান।

সাইফ পাওয়ারটেক আরও দাবি করছে, সালমান এফ রহমানের বেআইনি কর্মকাণ্ড বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে চেয়েছিলেন তরফদার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশে তরফদারকে রেডমার্ক করে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ করেছিলেন সালমান এফ রহমান। এ ছাড়াও ক্রীড়াক্ষেত্রে সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নীরব চাঁদাবাজি করা হয়েছে বলেও দাবি এই প্রতিষ্ঠানের। রুহুল আমিন তরফদার পতিত আওয়ামী লীগের কেউ-ই ছিলেন না-এটা প্রমাণে এখন মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তরফদারকে চেনেন-জানেন এমন ব্যবসায়ীদের মন্তব্য, ‘তিনি ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলান। এখন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুদৃষ্টিতে থাকতে চান, আবার ভবিষ্যৎ সরকারের সুনজরে থাকার প্রচেষ্টাও প্রবলভাবে আছে তরফদারের।’

যেভাবে হাতে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের

সাইফ পাওয়ারটেক চট্টগ্রাম বন্দর কুক্ষিগত করায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার অভিযোগ ছিল, ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) পদ্ধতিতে কাজ দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ রেগুলেশনস ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগাং পোর্টের ১২টি শর্ত সংশোধন করেছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনে কোণঠাসা হয় সাইফ পাওয়ারটেক। তখনই তরফদার হাত করেন বন্দর আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দীনকে। পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গী হন সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।

এরপর ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটির (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) চারটি টার্মিনাল পরিচালনার অপারেটর নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে। তখন সাইফ পাওয়ারটেকসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে দুটি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায় সাইফ পাওয়ারটেক। বাকি দুটি টার্মিনালও আ জ ম নাসির উদ্দীনের এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড এবং সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সকে সঙ্গে নিয়ে হাতিয়ে নেয় সাইফ পাওয়ারটেক। রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিষ্ঠান দুটিকে ৩০ শতাংশ করে ৬০ শতাংশ শেয়ার দিয়ে বাকি ৪০ শতাংশ সাইফ পাওয়ারটেক রাখে। অভিযোগ আছে, বন্দর কার্যক্রমে অভিজ্ঞ না হলেও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবার সাইফ পাওয়ারটেক এই দুই নেতার প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বন্দরে পূর্ণমাত্রার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এখন বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে প্রভাব সব বন্দরে

কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ছাড়াও ঢাকা ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি), পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), চট্টগ্রাম বন্দরের ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং বন্দরের যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও একচেটিয়া পায় সাইফ পাওয়ারটেক। অভিযোগ আছে, যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজে এমনভাবে দরপত্র তৈরি করা হতো, যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও কার্যাদেশ না পায়।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরের এনসিটি এবং সিসিটি টার্মিনাল সাইফ পাওয়ারটেকের হাতে থাকায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করে। এ ছাড়া তারা কারও কন্টেইনার আগে জাহাজীকরণ করত, আবার কারও কারওটা পরে করত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাণিজ্য এবং রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে দুদক তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

নন বাইন্ডিং চুক্তির আবরণে শেয়ারবাজার থেকে পুকুর চুরির অভিযোগ

২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য বন্দরে আমদানি পণ্য পরিবহনের জন্য আটটি জাহাজ পরিচালনার ঘোষণা দেয় শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানায়, তারা চট্টগ্রাম-ইইউ নৌরুটে জাহাজ পরিচালনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাফিন ফিডার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরপর আড়াই বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও ওই রুটে কোনো জাহাজ পরিচালনা করেনি তারা।

আবার বন্দরে একক আধিপত্যকে কেন্দ্র করে বেসরকারি অফডক নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্পও হাতে নেয় তারা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করা হলেও শেষ পর্যন্ত একটি প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ উঠেছে, শেয়ারের দর বাড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেই দেশি-বিদেশি একাধিক কোম্পানির সঙ্গে এসব নন বাইন্ডিং চুক্তি করত প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে সাইফ মেরিটাইম এলএলসি নামে দুবাইতে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে সাইফ পাওয়ারটেক। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের মূলধন কীভাবে দুবাইয়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকে। বিদেশে অর্থ নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়া ছয়টি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নেই সাইফ পাওয়ারটেকের নাম। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইফ পাওয়ারটেক যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে মূলধন দুবাইয়ে না নেয়, তাহলে নিশ্চয় মানি লন্ডারিং করেছে। তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

বন্দর থেকে রেলে চোখ

বন্দরের একক আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেডের (এসএলএএল) নামে নতুন মাল্টি-মডেল কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে রেলওয়ের প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) মহানগরীর হালিশহরের বন্দর কলোনিসংলগ্ন এলাকায় ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গায় প্রাইভেট অফডক নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। ওই কাজটি করার জন্য যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়, তাতে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স ছাড়া আরও ১৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র সংগ্রহ করে। কিন্তু টেন্ডারে এমন শর্ত রাখা হয়েছিল, শুধু সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স টেন্ডার ডকুমেন্ট জমা দিতে সক্ষম হয়েছে। শর্তের বেড়াজালে পড়ে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রই জমা দিতে পারেনি। ফলে একমাত্র অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সকে কার্যাদেশ দেয় কন্টেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এরপর ২০২৩ সালের ২ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসএলএএল-কে অফডক পরিচালনার অনুমোদন দেয়।

কিন্তু অফডক নীতিমালা অনুযায়ী, বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটারের ভেতরে কোনো বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো স্থাপন করা যাবে না। এমন শর্ত থাকলেও তা অমান্য করে রাজস্ব বোর্ড থেকে অনুমোদন বাগিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার মুখে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ৬ জুলাই ওই অনুমোদন বাতিল করে এনবিআর।

বন্দরে একক আধিপত্য বিস্তার, দুবাইয়ে টাকা পাচার, পুঁজিবাজার থেকে কৌশলে টাকা তুলে নেওয়াসহ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে তার কাছে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে এক দিন সময়ও নেন। কিন্তু তিনি প্রশ্নের উত্তর দেননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!