মুদ্রণ, প্রকাশনা ও ওষুধশিল্পের প্রধান কাঁচামাল—ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার ও আর্ট কার্ডসহ রপ্তানিমুখী প্যাকেজিং শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের মাধ্যমে সরকার বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বাণিজ্যিক আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ থাকলেও একশ্রেণির আমদানিকারক শুল্কমুক্ত ও বন্ড সুবিধায় এসব পণ্য এনে নানা কৌশলে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। ফলে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন, আর বিপুল অঙ্কের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি আমলা, অসাধু বন্ড কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে।
এদিকে এ খাতে দুর্নীতি বন্ধ ও সরকারি রাজস্ব বাড়াতে শুল্ককর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে চিঠি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলালের স্বাক্ষরে সোমবার ( ১৭ মার্চ ) এই চিঠি পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুদ্রণ, প্রকাশনা ও ওষুধশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার এবং আর্ট কার্ডসহ রপ্তানিমুখী প্যাকেজিং শিল্পে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, যা দেশে উৎপাদিত হয় না, নিয়মিত আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি হয়, যা বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টনে পৌঁছায়। বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত আমদানির পরও বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়। চীন, ভারত, কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়।
সূত্র অভিযোগ করেছে, বন্ডের আওতায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসে। পরে তারা এসব পণ্য কাগজে-কলমে রপ্তানি দেখালেও খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। বিশেষ করে বন্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদেরকে ঘুস দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এ ধরনের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়। এ কারণে এই খাতে সরকার বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে এ খাতের বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা আলোচ্য কাঁচামাল আমদানি করলেও প্রায়ই লোকসানের মুখে পড়েন। বাজারে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সুফল ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে, যদি ওষুধ, মুদ্রণ এবং রপ্তানিমুখী প্যাকেজিং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, তবে এই খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং সরকার বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব পাবে। বর্তমানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট, এআইটি, মূসকসহ মোট ৩১ শতাংশ কর সরকারকে প্রদান করতে হবে, যা বর্তমানে ৪৭ শতাংশ হতে পারে।