রপ্তানি পণ্য উৎপাদনের জন্য বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি করা পণ্য বা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রির প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেনন বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা। সভায় এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর অনুবিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বন্ড সুবিধার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনের জন্য শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। কিন্তু এনবিআরের তথ্যমতে, অনেক প্রতিষ্ঠানই এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেন। এর বিরুদ্ধে বর্তমানে ‘বিআইএন লক’সহ (প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স আইডি স্থগিত করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করা) ফৌজদারি মামলা করে এনবিআর। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সাথে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বন্ডের অপব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ট্যাক্স কমিশনারদের কাছে হালনাগাদ তথ্য চান এবং এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্সের’ ওপর জোর দেন। বন্ড অডিট কার্যক্রমের ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি সভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কাস্টমস হাউসগুলোতে নিলাম কার্যক্রম জোরদার করে কনটেইনার জট কমানোর নির্দেশনাও দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে পড়ে থাকা কনটেইনার ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নিলামে বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অপরদিকে, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো এবং অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিলের ন্যায় আগামী এক মাসের মধ্যে বন্ডের সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন বাধ্যতামূলক করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বন্ডের কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সেবার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পরামর্শ দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাঁচামাল ও পণ্য বাজারে বিক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিকভাবে সংশ্লিষ্ট আমাদানিকারকের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার জন্য চেয়ারম্যান কমিশনারদের নির্দেশনা প্রদান করেন। চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সাথে রাজস্ব বিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। বন্ডের অপব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের কাছে জানতে চান এবং এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় না দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বন্ড অডিট কার্যক্রম হতে অর্জিত ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি রাজস্ব সভায় উপস্থাপনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এনবিআরের তিনটি অফিসের আওতায় বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। মূলত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল ও অ্যাকসেসরিজ আমদানির সুবিধা দিতে বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর শর্ত হলো, আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য পুরোটাই রপ্তানি করতে হবে। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হলে ওই কাঁচামালের ওপরে প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে। এ লাইসেন্সের বড় একটি অংশ পেয়েছে পোশাক ও অ্যাকসরিজ কারখানাগুলোর। বস্ত্রকল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে এই সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন। চার-পাঁচ বছর আগে এনবিআর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং অভিযান চালায়। কিন্তু পরে এই কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বন্ড সুবিধার পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
এর আগে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দেশে যে পরিমাণ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হয়, বছরে তার পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।