বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) আরও তিনজন কর পরিদর্শককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সংক্রান্ত তিনটি পৃথক আদেশে সই করেছেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ২৭ জন কর কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হলো।
যাঁরা বরখাস্ত হয়েছেন, তাঁরা হলেন আয়কর, গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের আবদুল্লাহ আল মামুন; কর অঞ্চল-৬–এর কর পরিদর্শক রুহুল আমিন এবং কর অঞ্চল-২–এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
আদেশ অনুযায়ী, পাঁচজন উপ–কর কমিশনার বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং বদলি আদেশ অমান্যকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়েছেন। এসব কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী, তাঁদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।
গত মাসে এনবিআরে আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারাবাহিকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার উপকমিশনার থেকে শুরু করে নিরাপত্তাপ্রহরী পদ পর্যন্ত ৯ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগের দিন, মঙ্গলবার, বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকেও সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার।
ওই দিন যাঁরা বরখাস্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকার কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম; এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল; ঢাকা কর অঞ্চল-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন; কর অঞ্চল-১৫ এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ; কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান; নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান; খুলনা কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম; রংপুর কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার নুশরাত জাহান; কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান; খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর এবং ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।
এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছিল, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা সবাই সেই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি নেতৃত্বও দিয়েছেন। এই আন্দোলন হয় ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে। বরখাস্ত হওয়া মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এর পর থেকেই শুরু হয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। এখন পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। একই কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের দুই সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। তাঁদের অধিকাংশই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
**গোপন নথি ফাঁস: উপ কমিশনার বরখাস্ত
**এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে কটূক্তি, নিরাপত্তা প্রহরী বরখাস্ত
**বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা
**বদলির আদেশ ছিঁড়ে প্রতিবাদ, ২৫-২৬ কলম বিরতি