ফাঁকি স্বীকার করে ১৩ কোটি টাকা ভ্যাট জমা দিয়েছে বিএসআরএম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা) বিএসআরএম গ্রুপের স্টেইনলেস স্টিল পণ্য উৎপাদনকারী দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার অপরিশোধিত ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। ফাঁকি স্বীকার করে এই ভ্যাটের টাকা প্রতিষ্ঠানটি ৩০ ডিসেম্বর সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ফৌজদারহাট, চট্টগ্রামে অবস্থিত।এর মুসক নিবন্ধন নং- ০০০০১০১৮৩-০৫০৫। অন্যটি বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি আলী ম্যানশন, সদরঘাট রোড, চট্টগ্রামে অবস্থিত।এর মুসক নিবন্ধন নং- ০০০০১০৩২৩-০৫০৫। তদন্তকালে প্রতিষ্ঠান দুটির সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রত্যায়িত বার্ষিক প্রতিবেদন ও ভ্যাট বিষয়ক অন্যান্য তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন এর নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠান দুটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালের কার্যক্রম তদন্ত করে। তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৪ হাজার ২৭৪ টাকা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উৎসে ভ্যাট বাবদ ২১ কোটি ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৩ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার ২৯১ টাকা অপরিশোধিত ভ্যাট উদ্ঘাটিত হয়। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৩ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

অন্যদিকে, তদন্ত মেয়াদে বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৯৩ লাখ ৭০ হাজার ৩০ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৯ টাকার তথ্য উদঘাটন করা হয়। স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে ২ শতাংশ হারে ১০ লাখ ৯ হাজার ২৫৭ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

অপরদিকে, বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালের কার্যক্রম তদন্ত করে। তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ১১ কোটি ৭০ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩৭ টাকা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উৎসে ভ্যাট বাবদ ৮ কোটি ৭৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ১৬৭ টাকা অপরিশোধিত ভ্যাট উদঘাটন করা হয়। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৯০৪ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এছাড়া, তদন্ত মেয়াদে বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৩৮ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ৯১ হাজার ২৪৪ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৭ লাখ ১৮ হাজার ৬ টাকার তথ্য উদঘাটন করা হয়। স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে ২ শতাংশ হারে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান দুটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ টাকা এবং সুদ বাবদ ৩ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার ১৫৯ টাকাসহ সর্বমোট ১৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৩২ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনানুগ বিধিবিধান অনুসারে একাধিকবার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্য আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল স্বীকার করে তদন্ত মেয়াদে অপরিশোধিত মূসক বাবদ সমুদয় রাজস্ব স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বেচ্ছায় সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে অবহিত করে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত সমুদয় ভ্যাট আদায় হওয়ায় মামলা দুইটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!