এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর বিএসআরএম গ্রুপের স্টেইনলেস স্টিল পণ্য উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার অপরিশোধিত ভ্যাটের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। এই ভ্যাটের টাকা প্রতিষ্ঠানটি গতকাল সরকারি কোষাগারে জমা করে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ফৌজদারহাট, চট্টগ্রামে অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং-০০০০১০১৮৩-০৫০৫। অন্যটি বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি আলী ম্যানশন, সদরঘাট রোড, চট্টগ্রামে অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং-০০০০১০৩২৩-০৫০৫।
তদন্তকালে প্রতিষ্ঠান দুটির সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রত্যায়িত বার্ষিক প্রতিবেদন ও ভ্যাট বিষয়ক অন্যান্য তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠান দুটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেডের ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালর জুন পর্যন্ত সময়কালের কার্যক্রম তদন্ত করে। তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উৎসে ভ্যাট বাবদ ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে ছয় কোটি ৬২ লাখ টাকা অপরিশোধিত ভ্যাট উদ্ঘাটন করা হয়। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে দুই শতাংশ হারে দুই কোটি ২০ কোটি টাকা সুদ প্রযোজ্য।
অন্যদিকে, তদন্ত মেয়াদে বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৯৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৪ লাখ টাকার তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়। স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে দুই শতাংশ হারে ১০ লাখ টাকা সুদ প্রযোজ্য। অপরদিকে, বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের জুলাই/২০১৬ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়কালের কার্যক্রম তদন্ত করে। তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উৎসে ভ্যাট বাবদ আট কোটি ৭৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে দুই কোটি ৯৭ লাখ টাকা অপরিশোধিত ভ্যাট উদ্ঘাটন করা হয়।
এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে দুই শতাংশ হারে এক কোটি আট লাখ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এছাড়া, তদন্ত মেয়াদে বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ সাত লাখ টাকার তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়। স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে দুই শতাংশ হারে দুই লাখ টাকা সুদ প্রযোজ্য। বর্ণিত তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান দুটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং সুদ বাবদ তিন কোটি ৪০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনানুগ বিধিবিধান অনুসারে একাধিকবার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্য আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল স্বীকার করে তদন্ত মেয়াদে অপরিশোধিত মূসক বাবদ সমুদয় রাজস্ব স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বেচ্ছায় সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে অবহিত করে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত সমুদয় ভ্যাট আদায় হওয়ায় মামলা দুটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।