প্রিয়াংকা ফ্যাশন: বন্ডের কাঁচামাল আছে, কাঁচামাল নেই

## তিন বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা পৌনে দুই কোটি টাকার কাঁচামাল খোলাবাজারে
## ৬০,৬৯০ কেজি কাপড়ের নেই আমদানি প্রাপ্যতা, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা হয়েছে
## শুল্ককর ফাঁকি প্রায় চার কোটি টাকা, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাস্টমস গোয়েন্দার দুই মামলা

রাসেল মো. শাহেদ: তিন বিল অব এন্ট্রিতে বন্ড সুবিধায় আমদানি হয়েছে কাঁচামাল। কিন্তু সেই কাঁচামাল কারখানায় নেই। পোশাক তৈরি করে রপ্তানির কোন প্রমাণ নেই। রাজস্ব ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠান স্বজ্ঞানে খোলাবাজারে সেই কাঁচামাল বিক্রি করে দিয়েছে। আবার কারখানায় পাওয়া গেছে ৬০ হাজার ৬৯০ কেজি কাপড়। যার নেই কোন আমদানি প্রাপ্যতা। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি হয়েছে এই কাঁচামাল। যাতে দেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের শুল্ককর ফাঁকি। কখনো বন্ডের কাঁচামাল এনে বিক্রি করেছে খোলাবাজারে।

আবার কখনো আমদানি করেছে মিথ্যা ঘোষণায়। প্রিয়াংকা ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সাভারের এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় পৃথক দুইটি মামলা করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি মামলার প্রতিবেদন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। তবে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

Untitled

এনবিআর সূত্রমতে, সাভার আশুলিয়ার নরসিংহপুর সোনামিয়া মার্কেটের প্রিয়াংকা ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের গোপন তথ্য পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি ও অবৈধ মজুদ করে আসছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২ জুলাই কাস্টমস গোয়েন্দার একটি দল প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কাগজপত্র ও দলিলাদি জব্দ করেন। জব্দ করা কাগজপত্র ও দলিলাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের ৩১ মে, ১৫ ও ১৬ জুলাই তিনটি বিল অব এন্ট্রিতে বন্ডেড পণ্য আমদানি করেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য এক কোটি ৮৬ লাখ এক হাজার ১৯৪ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর এক কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৭ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, আমদানি করা এই কাপড় বা কাপড় দিয়ে তৈরি করা পণ্য প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও প্রোডাকশন ফ্লোরে পায়নি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কাপড় বা কাপড় দিয়ে তৈরি পণ্য দেখাতে ব্যর্থ হন। এমন কি পণ্য রপ্তানির কোন প্রমাণও দেখাতে পারেনি। বন্ড সুবিধার এই কাপড় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কালোবাজারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন, দেশীয় শিল্পের ক্ষতিসাধন ও দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ককর ফাঁকির অভিযোগে ৩ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।

অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানে তল্লাশির সময় ওয়্যারহাউসে থাকা কাঁচামালের ইনভেন্ট্রি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যাতে দেখা যায়, ওয়্যারহাউসে ৬০ হাজার ৬৯০ কেজি (২৮৯০ রোল) কাপড় রয়েছে। আমদানি করা এই কাপড়ের বিল অব এন্ট্রি, ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, এলসি, ইন-টু-বন্ড রেজিস্টার, পাশ বই দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে এসব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। তারা মৌখিকভাবে জানায় যে, এই কাপড়গুলো চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল একটি বিল অব এন্ট্রির (নং-৭৫৮৮২৪) মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা সেই বিল অব এন্ট্রি পর্যালোচনা করে দেখতে পান, এই বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ২৫ হাজার ৬২১ কেজি ৯৭ শতাংশ পলিস্টার কাপড়, ৩ শতাংশ এসপি এসটি নিট ফেব্রিক্স ডব্লিউ ডি-৬৩ কাপড় এইচএস কোড-৬০০৫.২১.০০ ঘোষণায় আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু ওয়্যারহাউসে পাওয়া ৬০ হাজার ৬৯০ কেজি ভেলভেট ফেব্রিক্স পাওয়া গেছে, যা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করেছে। খোলাবাজারে বিক্রির জন্য ওয়্যারহাউসে মজুদ করে রেখেছে। এই কাপড়ের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪ হাজার ৮৮৫ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ২ কোটি ২৬ লাখ ২ হাজার ৩২৩ টাকা। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ও অবৈধভাবে অপসারণের উদ্দেশ্যে মজুদ করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪ জুলাই অপর একটি মামলা করা হয়। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৬ জুলাই ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কাস্টমস গোয়েন্দা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে-তিনটি বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা কাপড় কাস্টমস গোয়েন্দা ফ্যাক্টরি পায়নি। এসব কাপড় শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে প্রিয়াংকা ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়ালি উল্যাহ বলেন, আমরা পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করেছি। যার কারণে তারা কাপড় পায়নি। আপনারা তো কাস্টমস গোয়েন্দাকে কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কাগজপত্র রয়েছে। আমরা সেই কাগজপত্র দেখাবো। তবে সে সময় দেখাতে পারিনি। অপর মামলায় বলা হয়েছে-২৮৯০ রোল কাপড়ের আমদানি প্রাপ্যতা নেই। এসব কাপড় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা হয়েছে। এই বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টির কোন ভিত্তি নেই। আমরা রপ্তানি করেছি, না হলে কাপড় আছে। আমদানি প্রাপ্যতার জন্য বন্ড কমিশনারেটে আবেদন করা আছে।

###

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!