প্রাপ্যতা জালিয়াতি, এমডি-চেয়ারম্যানের নামে মামলা

বিজনেস বার্তায় নিউজ প্রকাশের পর

** পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের প্রাপ্যতা দেয়নি বন্ড কমিশনারেট, অথচ ২৫০ ও ৭৭ টন প্রাপ্যতা বন্ডের ওয়েবসাইটে
** নিউজ প্রকাশের পর জংশিন টেক্সটাইলে প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে উত্তর বন্ড কমিশনারেট
** প্রাপ্যতা জালিয়াতি, পলিস্টার ফ্রেবিক্সস খোলাবাইরে বিক্রির বিষয় তদন্ত করতে কমিশনারেটে তদন্ত কমিটি গঠন
** মামলায় পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার ও পলিস্টার ফ্রেবিক্সস বিক্রির মূলহোতা সিঅ্যান্ডএফ দালাল ওবায়দুর রহমান, ও ব্যবস্থাপক মো. মমিনুর ইসলামকে আসামি করা হয়নি
** তিন বছরে ৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন পলিস্টার ফ্রেবিক্স ও পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার প্রাপ্যতা নিয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ পণ্যের হদিস নেই

জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড। একটি এক্সেসরিজ বন্ডেড প্রতিষ্ঠান। পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার শীট বন্ডের কোনো পণ্য নয়। অথচ দুই ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রাপ্যতার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রথমবার ৭৭ মেট্রিক টন, দ্বিতীয়বার ২৫০ মেট্রিক টন। শুধু প্রাপ্যতার অনুমোদন নয়, খালাস করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার বরাবর বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। খালাস হওয়া বন্ড সুবিধার এসব পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার গেছে পল্টন এলাকায়। এছাড়া শত শত টন পলিস্টার ফ্রেবিক্সস (বোরকার কাপড়) প্রাপ্যতা দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান আমদানি করে সরাসরি বিক্রি করে দিয়েছে ডেমরা ও ইসলামপুরে। প্রতিষ্ঠানের কোনো মেশিনারিজ নেই, উৎপাদন হয় না, ভুয়া রপ্তানি দেখানো হয়, ঘুসের বিনিময়ে প্রাপ্যতা ও পণ্য খালাস নিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বিজনেস বার্তায় বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বন্ড কমিশনারেটের টনক নড়ে। প্রতিষ্ঠানের ফাইল যাচাই করে বন্ড কমিশনারেট বলছে, তারা প্রতিষ্ঠানকে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের প্রাপ্যতা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রাপ্যতার আদেশ ও কর্মকর্তার সই নকল করে ভুয়া প্রাপ্যতা তৈরি করেছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক করা হয়।

প্রতিষ্ঠানে প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম পরিচালনা করেন বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। আর জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান ও কর্মাশিয়াল ম্যানেজারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে থানায় মামলা করেছে। প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি, প্রাপ্যতা, কিভাবে অডিটে সব ঠিক আছে-এমন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা যাচাইয়ে বন্ড কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহকে প্রধানকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে ‘মোটা অংকের প্যাকেজ ঘুসে’ একাধিকবার পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের প্রাপ্যতা এই কমিশনারেটের কর্মকর্তারা অনুমোদন দিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। মামলার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের এমডি চীনে পলানো ও প্রতিষ্ঠানের দালাল ওবায়দুর রহমান বিভিন্ন মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এনবিআর, বন্ড কমিশনারেট ও থানাকে ম্যানেজ করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে একাধিক সূত্র বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছে।

বিজনেস বার্তায় নিউজ প্রকাশের পরপরই প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক ও মামলা

সূত্রমতে, ২ সেপ্টেম্বর বিজনেস বার্তায় ‘জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড-রপ্তানি না করেও পাচ্ছে প্রাপ্যতা-ইউপি, বিক্রি করে এলসি’-শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই এনবিআর ও ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেটে এই নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট জংশিন টেক্সটাইলের ফাইল খতিয়ে দেখা শুরু করে। প্রথমে প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে জংশিন টেক্সটাইলের বন্ড ফাইলে ‘পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার শীট’ এর কোন প্রাপ্যতার তথ্য নেই বলে নিশ্চিত হন কর্মকর্তারা। ফাইলে প্রাপ্যতার কাগজ নেই। অথচ বন্ড কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার এর প্রাপ্যতা অনুমোদনের কাগজ আপলোড কিভাবে করা হয়েছে, তাতে কর্মকর্তারা সই রয়েছে-বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনারেটে তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠান পলিস্টার ফেব্রিক্সস আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে, পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার খোলাবাজারে বিক্রি করে-এরপরও কিভাবে প্রতিষ্ঠানের অডিট অনুমোদন করা হয়েছে-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কমিশনার তড়িঘড়ি করে একটি প্রিভেন্টিভ টিম করে ৩ সেপ্টেম্বর জংশিন টেক্সটাইলে পাঠায়। একইসঙ্গে জালিয়াতি করে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার প্রাপ্যতা নেয়ায় ওইদিন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা বাদি হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অজাহার (মামলা) দায়ের করেন। তাতে কমিশনারেটের ‘কর্মকর্তার সই জাল করে অবৈধ প্রাপ্যতা শীট প্রস্তুতপূর্বক বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি করে শুল্ককর ফাঁকির’ অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলায় জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনের নাগরিক জিয়াও হুযাসং বা ডেনিয়েল, চেয়ারম্যান লিবেন লিউ ও প্রতিষ্ঠানের কর্মাশিয়াল ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেন সোহাগকে আসামি করা হয়েছে। তবে বন্ড কমিশনারেটে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ‘প্যাকেজ ঘুসের’ বিনিময়ে জাল প্রাপ্যতা তৈরির সঙ্গে যুক্ত জংশিন ও সিঅ্যান্ডএফ এর দালাল ওবায়দুর রহমানকে আসামি করা হয়নি। এছাড়া এই জাল প্রাপ্যতার কাগজ বন্ড কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে আপলোডকারী প্রোগ্রামার মো. নাজমুল আহসান ও মো. আতিকুর রহমানকে আসামি করা হয়নি।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেডের ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি হতে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি হতে ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি প্রাপ্যতা আদেশে ‘পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার’ ব্যতীত অন্যান্য কাঁচামালের উপর প্রাপ্যতা দেওয়া হয়। তবে ২ সেপ্টেম্বর অনলাইন পত্রিকা ‘বিজনেস বার্তায়’ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জংশিন টেক্সটাইল নামের প্রতিষ্ঠানটি পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার নামের কাঁচামাল বন্ড সুবিধায় (আইএম-৭) চলতি বছরের ৩ জুন বিল অব এন্ট্রি সি-১০৯৩৩৮৪ এর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৮৬৮ কেজি, ৩১ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি সি-১৬২০৯৮০ এর মাধ্যমে ১৯ হাজার ৩৮৬ কেজি আমদানি করেছে।

পর্যোলোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াও হুযাসং বা ডেনিয়েল, চেয়ারম্যান লিবেন লিউ ও প্রতিষ্ঠানের কর্মাশিয়াল ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেন সোহাগ বন্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (প্রাপ্যতা অনুমোদনকারী কর্মকর্তা) সই জাল করে নকল প্রাপ্যতা আদেশ প্রস্তুত করে দুইটি পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের চালান আমদানি করেছেন, যা জালিয়াতির সামিল। যার মাধ্যমে কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর ধারা ১২ ও ৩৩ অনুযায়ী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির যোগসাজসে এরূপ অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, যা কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫বি এর (১) (বি) ধারা মোতাবেক দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য। এছাড়াও বাংলাদেশ পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ধারা ১০৯, ৪৬৭ ও ৪৬৮ অনুযায়ী সংগঠিত অপরাধ, যা উক্ত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। সেজন্য এই এজাহার বা মামলা দায়ের করা হলো।

বিজনেস বার্তার অনুসন্ধান বলছে, জংশিন টেক্সটাইল একটি এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান ও বন্ড প্রতিষ্ঠান। পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার কোনো বন্ড সুবিধার পণ্য নয়, একটি একটি কর্মাশিয়াল পণ্য। কিন্তু চলতি বছরের ২৩ মে ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ মেট্রিক টন পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার শীটের প্রাপ্যতার অনুমোদন দেওয়া হয়। যাতে সই করেন সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ। তবে এই প্রাপ্যতা তিনি অনুমোদন দেননি, তার সই জাল করে প্রাপ্যতা তৈরি করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিজনেস বার্তার অনুসন্ধান বলছে, জংশিনকে এর আগে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট ৭৭ মেট্রিক টন পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার আমদানির প্রাপ্যতা দেওয়া হয়েছে। যাতে সই করেছেন উপ কমিশনার কাজিয়া সুলতানা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান। অথচ মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, জংশিনের ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি হতে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। নিরীক্ষা করার সময় কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার আমদানি-রপ্তানির কোনো তথ্য যাচাই করেনি বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ ঘুস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাগজ না দেখে চোখ বন্ধ করে নিরীক্ষায় সই করেছেন।

মামলার বিবরণ বলা হয়েছে, জংশিন টেক্সটাইলের নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি হতে ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি প্রাপ্যতা আদেশে ‘পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার’ ব্যতীত অন্যান্য কাঁচামালের উপর প্রাপ্যতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের কোনো প্রাপ্যতা দেওয়া হয়নি। অনুসন্ধান বলছে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এই বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রতিষ্ঠানকে একটি ‘প্রত্যয়নপত্র’ দেওয়া হয়েছে। যাতে সই করেছেন সেই সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে কাঁচামাল খালাস করতে অনুরোধ করে দেওয়া সেই প্রত্যয়নপত্রে দুইটি এলসিতে ১৯ হাজার ৬৪৯ কেজি (১৯ দশমিক ৬৪৯ মেট্রিক টন) ও ২১ হাজার ২২৮ কেজি (২১ দশমিক ২২৮ মেট্রিক টন) পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার রয়েছে।

প্রাপ্যতা জালিয়াতি যাচাই ও অডিট নিয়ে প্রশ্ন, কমিটি করে দায় সারছে কমিশনারেট

সূত্রমতে, প্রতিষ্ঠানের অডিট করার সময় অনুমোদিত প্রাপ্যতা, আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ, এলসি, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরিত হয়েছে কিনা, শুল্ককর পরিশোধ করেছে কিনা, প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান যেসব কাঁচামাল আমদানি করেছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার হয়েছে কিনা, প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল প্রবেশ করেছে কিনা, ওয়্যারহাউজে কাঁচামাল রয়েছে কিনা, প্রতিষ্ঠান যেসব কাঁচামাল আমদানি করে, তা দিয়ে পণ্য তৈরির জন্য মেশিনারিজ রয়েছে কিনা-ইত্যাদি বন্ডের নিরীক্ষা কর্মকর্তারা যাচাই করার কথা। বলছে, প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়নি, শুল্ককর ফাঁকি হয়নি, সব ঠিক আছে। প্রতিষ্ঠানের সব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি হয়। তাহলে নিরীক্ষা কর্মকর্তারা সব ঠিক পেলেন কিভাবে? তথ্য বলছে, নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কয়েক কোটি টাকা ঘুস দেওয়ার পর চোখ বন্ধ করে তারা সই করেছেন। অথচ এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এনবিআর বা বন্ড কমিশনারেট থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। তবে বন্ড কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহকে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে বন্ড কমিশনারেট।

প্রাপ্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে জড়িত যেসব কর্মকর্তা, তিন বছরে প্রাপ্যতা-আমদানি ৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন, যা সবই বিক্রি করেছে

তথ্যমতে, ২৫০ মেট্রিক টন পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার প্রাপ্যতা দিয়েছে সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ। আর ৭৭ মেট্রিক টন অনুমোদন দিয়েছে উপ কমিশনার কাজিয়া সুলতানা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে দুইটি এলসিতে ১৯ হাজার ৬৪৯ কেজি (১৯ দশমিক ৬৪৯ মেট্রিক টন) ও ২১ হাজার ২২৮ কেজি (২১ দশমিক ২২৮ মেট্রিক টন) পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার খালাস করতে অনুরোধ জানিয়ে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ। এদের বিরুদ্ধে বন্ড কমিশনারেট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৭ মার্চ ৫২৮ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন প্রাপ্যতা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে পলিস্টার ফ্রেবিক্সস ৩৯১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন। তাও অনুমোদন করেছেন সেই মো. মালেকীন নাসির আকন্দ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা। ৭ আগস্ট ১৩ মেট্রিক টন অনুমোদন করেছেন মো. মালেকীন নাসির আকন্দ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন। ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ১৩ মেট্রিক টন প্রাপ্যতা দিয়েছে উপ কমিশনার চপল চাকমা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান। একই বছরের ৪ ডিসেম্বর ৯১ মেট্রিক টন অনুমোদন দিয়েছে উপ কমিশনার মিতুল বনিক ও মো. আবদুর রহমান। ১৩ নভেম্বর ১১৮ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন একই কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়েছেন। ৬ নভেম্বর ৯২ দশমিক ৯১ মেট্রিক টন অনুমোদন দেয় কাজিয়া সুলতানা। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৫ মেট্রিক টন অনুমোদন দেন সেই কাজিয়া সুলতানা। ২০২৩ সালের ১৫ মে ৪৮৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন অনুমোদন দিয়েছে চপল চাকমা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা উম্মে সাদিয়া জাহান। ওই বছরের ১১ এপ্রিল চপল চাকমা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ৬৭০ মেট্রিক টন প্রাপ্যতা দিয়েছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ৫৪৪ দশমিক ২০ মেট্রিক টন অনুমোদন দিয়েছে চপল চাকমা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন পলিস্টার ফ্রেবিক্সস ও পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার প্রাপ্যতা নিয়ে আমদানি করেছে। কিন্তু সবই খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। যাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। আর প্রতি প্রাপ্যতা অনুমোদনে প্যাকেজ ঘুস হিসেবে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে প্রাপ্যতা অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ঘুস দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

মামলায় তিন মূলহোতাকে আসামি করা হয়নি

জংশিন টেক্সটাইলের বন্ড সুবিধায় বেশিরভাগ সময় দুইটি কাঁচামাল আমদানি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে পলিস্টার ফ্রেবিক্সস, যা বোরকার কাপড় হিসেবে পরিচিত। এই পলিস্টার ফ্রেবিক্সস দিয়ে পণ্য তৈরির জন্য এই প্রতিষ্ঠানের তেমন মেশিনারিজ নেই। দ্বিতীয় আমদানি করে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার শীট। উৎপাদন না করেই বন্ড সুবিধার এই দুইটি কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে। তবে বিক্রির প্রক্রিয়া চমৎকার। প্রতিষ্ঠানের এমডি ডেনিয়েলের সঙ্গে যোগসাজসে বিভিন্ন অসাধু ব্যক্তির থেকে টাকা নিয়ে এলসি সংগ্রহ করে সিঅ্যান্ডএফ দালাল একেএম রেজাউর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাসিসটেন্ট কর্মাশিয়াল ম্যানেজার মো. মমিনুর রহমান। এই মমিনুর রহমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভূয়া রপ্তানির কাগজপত্র তৈরি করে। কর্মাশিয়াল ম্যানেজার ইকবাল হোসেন সোহাগ প্রতিষ্ঠান ও সিঅ্যান্ডএফ দালাল ওবায়দুর রহমানের সহায়তায় বন্ড কমিশনারেটে ‘প্যাকেজ ঘুস’ দিয়ে প্রাপ্যতা নেয়। ওবায়দুর ও রেজাউর কাস্টম হাউস, কাস্টমস গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য ছাড়াতে ঘুসের লেনদেন করে। পলিস্টার ফ্রেবিক্সস আমদানির পরপরই রাজধানীর ডেমরা ও ইসলামপুরে চলে যায়। আর পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার আমদানি করে তা পল্টন এলাকায় বিক্রি করা হয়। বিনিময়ে ডেনিয়েল প্রতি কন্টেইনার ১৫-২০ লাখ টাকা পান। এই টাকা একেএম রেজাউর রহমান ও ওবায়দুরের সহযোগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে চীনে চলে যায়। অথচ মামলায় ওবায়দুর রহমান, একেএম রেজাউর রহমান ও মো. মমিনুর রহমাকে আসামি করা হয়নি।

পালানোর চেষ্টা করছে এমডি

একটি বিশ্বস্ত সূত্র বিজনেস বার্তাকে জানিয়ে, মামলার বিষয়টি ৩ সেপ্টেম্বর এমডি ডেনিয়েলকে তার কর্মকর্তারা জানানোর পর তিনি বিচলিত হয়ে উঠেন। এনবিআর, বন্ড কমিশনারেট ও থানাকে ম্যানেজ করতে সেই দালাল ওবায়দুর রহমান ও তার এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। দুইজন বুধবার ও বৃহস্পতিবার সারাদিন বিভিন্ন মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বন্ড কমিশনারেট ও থানাকে থামাতে চেষ্টা করেছেন। তবে মামলার কথা শুনে ডেনিয়েল বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি তার কর্মকর্তাদের বিমানের টিকেট কাটতে বলেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

** জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড-রপ্তানি না করেও পাচ্ছে প্রাপ্যতা-ইউপি, বিক্রি করে এলসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!