প্রশাসনে ৪ লাখ ৭৩ হাজার পদ শূন্য

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনে মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১টি পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদের সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৯। এ বিশাল সংখ্যক পদ খালি থাকার ফলে সরকারি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে এবং দাপ্তরিক কাজের গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

কিছু মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কাজে চরম স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। এই অবস্থার মধ্যে, প্রশাসনের শূন্যপদ পূরণের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তথ্যটি নিশ্চিত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রায় পাঁচ লাখ পদ খালি রয়েছে।’

৪৪ থেকে ৪৭তম বিসিএসে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে অন্তত ১৮ হাজারের বেশি নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অধীন শূন্যপদ দ্রুত পূরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে, ২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধীন দপ্তর/সংস্থা এবং মাঠ প্রশাসনের শূন্যপদ পূরণে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল, বর্তমানে সরকারের অনুমোদিত শূন্যপদের সংখ্যা চার লাখ ৭৩ হাজার একটি।

সম্প্রতি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) ৪৭তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তিন হাজার ৬৮৮টি শূন্যপদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিপিএসসি শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার এবং সীমিত দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ করে থাকে। অন্যদিকে, সরকার অনুমোদিত অন্যান্য পদগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধীন দপ্তর/সংস্থা/করপোরেশন/কম্পানি থেকে পূর্ণ করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব দূর করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে, দেশে বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও তা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

শূন্যপদ পূরণে এরই মধ্যে কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সেই তথ্য আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও অনুরোধ জানানো হয়। তার পরও এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।

সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ পদ খালি ছিল, যার মধ্যে বড় অংশ ছিল ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখের মতো খালি থাকে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসন চরম বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা সব কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়, যার ফলে নিয়োগ কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং প্রশাসনের স্থবিরতা চরম আকার ধারণ করে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দিতে চিঠি দেন জনপ্রশাসনসচিব মোখলেস উর রহমান। চিঠিতে বলা হয়, ‘দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনা এবং জনসাধারণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীন দপ্তরগুলোতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম আগামী এক মাসের মধ্যে শুরু করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক জানান, আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থাগুলো সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে, অর্থাৎ পিএসসির মাধ্যমে যেতে হবে না। দাপ্তরিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার এবং জনগণকে যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব পদে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদের সংখ্যা মোট দুই লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৯টি। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১৩তম থেকে ১৬তম গ্রেডে শূন্যপদের সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডে শূন্যপদের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার ২৪৫টি। তৃতীয় শ্রেণির মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা সাত লাখ ৬৫ হাজার ৬২৬টি, যেখানে কর্মরত রয়েছেন ছয় লাখ ২০ হাজার ৯৭২ জন। অন্যদিকে, চতুর্থ শ্রেণির মোট পদ পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৩টি, যার বিপরীতে কর্মরত আছেন তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৮ জন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!