জেলা প্রশাসকেরা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম জোরদারে প্রতিটি জেলায় দুদক কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি-পদায়ন বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয় কমিশনারদের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছেন।এ বছরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন সামনে রেখে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা এ রকম মোট ৩৫৪টি প্রস্তাব দিয়েছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
ডিসি সম্মেলনে ওই সব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। আগামী রোববার ঢাকায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এই ডিসি সম্মেলন। শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও হবে আলোচনা।
প্রতিবছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এই ডিসি সম্মেলন। ডিসিরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়, উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন ডিসিরা। এ জন্য ডিসি সম্মেলন ও তাঁদের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
এবার ভিন্ন রকম পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই সম্মেলন। অন্যবার সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন। পরে কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হতো।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এবার ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন তিনি এবং উপদেষ্টারা কার্য অধিবেশনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে ৩৪টি অধিবেশন থাকলেও রাষ্ট্রপতি ও স্পিকারের সঙ্গে অধিবেশন নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি অধিবেশন থাকবে, যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনের শুরুর আগের দিন আগামীকাল শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে।
ডিসিদের যত প্রস্তাব
বর্তমানে সারা দেশের ৩৬টি জেলায় দুদকের কার্যালয় আছে। এখন প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগেরও প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। তিনজন জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব করেছেন।
বর্তমানে ডিসি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি ও পদায়নের কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে মন্ত্রণালয়। পরে বিভাগীয় কমিশনাররা ইউএনওদের বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন করেন। এখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বদলি ও পদায়নের কাজটিও বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, এমন প্রস্তাব প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে একটি পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষাটি বিসিএসের প্রিলিমিনারির মতো। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয়। এখন প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা—এই তিন ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো সরকারি করার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। অবশ্য শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে এসব মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক সম্প্রতি শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের কাছে গিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর আগে মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হয়।
ডিসি সম্মেলনে স্বতন্ত্র পুলিশ তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত কার্যক্রম সহজ করবে। বিদ্যমান পিবিআইকে একজন স্বতন্ত্র ইন্সপেক্টর জেনারেলের অধীনে এই বিভাগে উন্নীত করার সম্ভাবনাও আলোচনা হতে পারে।